আশা জীবনের একমাত্র চাবিকাঠি কেন ? Asha
জীবনটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন আমরা বাস্তবতার সম্মুখীন হই। কোথায় আছে বাস্তবতা অনেক বড় কঠিন কিন্তু সমস্ত বাস্তবতার মধ্য দিয়ে জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করাটাই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা। আর জীবনের সার্থকতা তখনই আসবে যখন আমরা আমাদের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারব। আর জীবনকে তখনই সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারব যখন আমাদের লক্ষ্য স্থির থাকবে আর লক্ষ টাকে তখনই স্থির করতে পারব যখন আমাদের মনের ভিতর স্বপ্ন বাস করবে। আর এই সকল কিছুর পিছনে রয়েছে আশা ।আজকের আলোচনার বিষয়ে হলো আসা আসুন একটা রূপক গল্পের ম্ধ্যমে দেখা যাক এই আশা কিভাবে একটি মানুষের জীবনে অন্ধকারের আলোর প্রদীপ হয়ে জ্বলে ওঠে।
একটি অন্ধকার রুমের ভেতরে চারটি মোমবাতি জ্বলছিলো। প্রথম মোমবাতি হল শান্তি, দ্বিতীয় মোমবাতি হল বিশ্বাস,তৃতীয় মোমবাতি হল ভালবাসা, চার নম্বর মোমবাতি হল আশা। এক সময় সেই মোমবাতি গুলো একে অপরের সাথে তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলা শুরু করলো।
1> প্রথম মোমবাতি টি বললো, 'আমি শান্তি ! কেউ আমাকে জ্বালিয়ে রাখতে পারে না বেশিক্ষণ। আমি হুট করে নিভে যাই।'
এই কথা বলার কিছুক্ষণ পর সেটি হুট করে নিভে গেলো।
2 > দ্বিতীয় মোমবাতি টি বললো, 'আমি বিশ্বাস ! শান্তি যেহেতু নেই, তাই আমি আর কি করব। আমার আর জ্বলে থাকার কোনো প্রয়োজন দেখছিনা। আমি এখন নিভে যাবো'। কথা শেষ করার পর দ্বিতীয় মোমবাতি বিশ্বাস টি নিভে গেলো।
3> তৃতীয় মোমবাতি এবার মুখ খুললো, আমি ভালবাসা! "শান্তি এবং বিশ্বাস কেউ নেই, সেখানে ভালবাসা থাকতে পারে না। তাই আমিও বেশিক্ষণ টিকতে পারবো না। মানুষেরা আমাকে গুরুত্ব না দিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখে। শুধু তাই না, ওরা প্রিয় মানুষ গুলোকে পর্যন্ত ভুলে যায়।" কথা শেষ করে তৃতীয় মোমবাতি টিও নিভে গেলো।
কিছুক্ষণ পর রুমের মধ্যে একটি বৈকুন্ঠ শিশু প্রবেশ করলো, তিনটা নিভে যাওয়া মোমবাতির পাশে টিমটিমে জ্বলতে থাকা চতুর্থ মোমবাতি দেখে শিশুটি প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, তোমরা জ্বলছো না কেন? তোমাদের পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত জ্বলা উচিৎ ছিলো। দেখো চারপাশটা কেমন অন্ধকার, আমার তো ভয় করছে। তারপর শিশুটি ভয় পেয়ে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
4> এবার চার নম্বর মোমবাতি টি মুখ খুলল। 'ভয় পেয়ো না সোনামনি। আমি যতক্ষণ জ্বলছি, তুমি চাইলেই আমাকে দিয়ে আবার বাকি মোমবাতি গুলোকে জ্বালাতে পারো। আমার নাম আশা!
শিশুটি আশা নামের মোমবাতিটি দিয়ে একে একে বাকি মোমবাতি গুলোকে আবারো জ্বালালো। সমস্ত রুমটা আবারো উজ্জ্বল আলোতে আলোকিত হয়ে উঠলো।
গল্পটি রূপক। হাজারো হতাশা, দুঃখ আর সমস্যার অন্ধকারে ডুবে গিয়ে আশা নামের আলোটিকে কখনোই নিভতে দেওয়া উচিৎ নয়। কারন আশা না থাকলে আমাদের জীবন থেকে শান্তি, বিশ্বাস এবং ভালবাসাও অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। তেমনিই কলিসন্তোরন উপনিষদে বলা হয়েছে, এই কলি যুগে হরিনাম বিনা, হরিনাম বিনা, হরিনাম বিনা আর কোন গতি নাই, গতি নাই, গতি নাই। তাই আসুন আমাদের জীবনে প্রকৃত আশার আলো জ্বালাতে হলে হরিনামের আশ্রয় গ্রহন করে দিব্য আনন্দ, দিব্য শান্তি, দিব্য বিশ্বাস ও অনাবিল আনন্দে ভরে উঠোক হৃদয়। তখনই দিব্য হতে পারবো যদি হৃদয়ে ঘুমন্ত গোবিন্দ কে হরিনামের মাধ্যমে জাগ্রত করি। কারণ চৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে “কৃষ্ণ- সূর্যসম; মায়া হয় অন্ধকার। যাঁহা কৃষ্ণ, তাঁহা নাহি মায়ার অধিকার।
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সূর্যের মতো এবং তিনি যেখানে থাকেন সেখানে মায়ার অন্ধকার থাকতে পারে না। বসুদেব যখন শ্রীকৃষ্ণকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন রাত্রির অন্ধকার বিদুরিত হয়ে গেল।