বৈশাখ মাসে তুলসীতে জল দান মাহাত্ম্য। তুলসীতে জল দান Give water to Tulsi
শাস্ত্রে বলা হয়েছে সমস্ত তীর্থ স্থানের মধ্যে গঙ্গোত্রী তীর্থস্থান শ্রেষ্ঠ তেমনি বারটি মাসের মধ্যে বৈশাখ মাস শ্রেষ্ঠ। মা যেমন তার সন্তানের সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ করে তেমনি এই বৈশাখ মাস সবার মনোবাসনা পূর্ণ করে থাকে। বৈশাখ মাসের মাহাত্ম্য কথা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে আপনারা ঘুরে আসতে পারেন। আজকে আলোচনা করব এই বৈশাখ মাসে তুলসীতে জল দান মাহাত্ম্য কথা নিয়ে।
বৈশাখ মাসের মাহাত্ম্য কথা- বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তুলসীতে জল দান মাহাত্ম
বৈশাখ মাসে যেহেতু সূর্যের তাপ অত্যাধিক বেশি তাই এই মাসে বিষ্ণু ভক্তগণকে জল দান করা হলে শ্রী হরি অত্যন্ত প্রিত হন। তাই এই মাসে শ্রী তুলসী মহারানী কে জল দানেরও এক অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। কারণ তুলসী মহারানী হলেন ভগবানের খুব প্রিয়।
কেন তুলসীতে জল দান কর্তব্য
শ্রী তুলসী মহারানী হলেন কৃষ্ণ প্রিয়সী তার কৃপার ফলেই আমরা শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার সুযোগ লাভ করি। তুলসী দেবী সম্বন্ধে বলা হয়েছে- তুলসী দর্শন করলে পাপ-নাশ হয়, জল দান করলে জম ভয় দূর হয়। রোপন করলে কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তুলসীপত্র শ্রী হরি চরণে অর্পণ করলে কৃষ্ণ প্রেম লাভ হয়।
পদ্মপুরাণের সৃষ্টি খন্ডে মহাদেব শিব তার পুত্র কার্তিক কে বলেন
সর্বেভ্যঃ পত্রপুষ্পেভ্যঃ সত্তমা তুলসী শিবা
সর্বকামপ্রদা শুদ্ধা বৈষ্ণবী বিষ্ণুসুপ্রিয়া ।।
সমস্ত পত্র ও পুষ্পের মধ্যে তুলসী হচ্ছেন স্রষ্টা। তুলসী সর্বকম প্রদান মঙ্গলময়ী শ্রদ্ধা, মুখ্যা, বৈষ্ণবী, বিষ্ণুর প্রিয়সি এবং সর্বলোকে পরম সুভা।
ভগবান শিব আরো বললেন
হে কার্তিক যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে প্রতিদিন তুলসী মঞ্জরী দিয়ে শ্রী হরির আরাধনা করে এমনকি আমিও তার পূর্ণ বর্ণনা করতে অক্ষম। যেখানে তুলসীর বন আছে শ্রী গোবিন্দ সেখানেই বাস করেন আর গোবিন্দের সেবার উদ্দেশ্যে লক্ষ্মী, ব্রহ্মা প্রভৃতি সমস্ত দেবতা সেখানেই বাস করেন।
মূলত শ্রীকৃষ্ণই জগতের আবদ্ধ জীবনকে তার সেবা করার সুযোগ প্রদান করার জন্য শ্রী তুলসী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তুলসী বৃক্ষকে সর্বাপেক্ষা প্রিয় রূপে গ্রহণ করেছেন । পাতাল খন্ডে ঐ বিপ্রের নিকটে তুলসীর মহিমা কীর্তন করেন বৈশাখে তুলসীপত্র দ্বারা শ্রী হরি সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ বৈশাখ মাস অনন্য ভক্তিসহকারে তুলসী দ্বারা ত্রিসন্ধ্যা শ্রীকৃষ্ণের অর্চনা করেন তার আর পুনর্জন্ম হয় না।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে প্রকৃতি খন্ডে বর্ণনা করা হয়েছে
যিনি সকলের শিরোধার্যা উপাস্য জীবনমুক্তা মুক্তিদায়িনি এবং শ্রীহরিভক্তিপ্রদায়িনী। সেই সমগ্র বিশ্বকে পবিত্রাকারিনী বিশ্ব পাবনী তুলসী দেবীকে সততা প্রণাম করি।
ব্যাসদেব তুলসী মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে পদ্মপুরাণের সৃষ্টি খন্ডে (৬০.১২৭-২৮) বলেছেন-
শ্রীমতি তুলসী দেবীর পূজা, কীর্তন, ধ্যান, রোপন ও কন্ঠে ধারনে সমস্ত পাপ নাশ হয় এবং পরম গতি লাভ হয়। যে ব্যক্তি অন্যকে তুলসী দ্বারা শ্রীহরির অর্চনার উপদেশ দেন এবং নিজেও অর্চনা করেন তিনি শ্রী মাধবের আলয়ে গমন করেন শুধু শ্রীমতি তুলসী দেবীর নাম উচ্চারণ করলেই শ্রী হরি প্রসন্ন হন ফলে পাপ সমূহ নাশ হয় এবং অনন্ত কোটি পরিমাণ পূর্ণ অর্জিত হয়।
পদ্মপুরাণের ব্রহ্ম খন্ডে বলা হয়েছে
গঙ্গাদি সমস্ত পবিত্র নদী এবং ব্রহ্মা-বিষ্ণু, মহেশ্বর এবং সমস্ত তীর্থ সর্বদাই তুলসী দলে বিরাজ করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে যে সমগ্র পৃথিবীতে সাড়ে তিন কোটি তীর্থ রয়েছে তুলসী উদ্ভিদের মূলে সমস্ত তীর্থ অবস্থান করে । শুধুমাত্র তুলসী মহারানীর কিপার ফলে কৃষ্ণভক্তি লাভ হয় এবং বৃন্দাবনে বসবাসের যোগ্যতা অর্জিত হয় ।
শাস্ত্রে তুলসী মহারানী কে জল দান প্রসঙ্গে আরও বলা হয়েছে যে-তুলসী মূলে যে জল অবশিষ্ট থাকে তারও বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে এ বিষয়ে একটি কাহিনী রয়েছে।
কোন এক সময় এক বৈষ্ণব তুলসী দেবীকে জলধান ও পরিক্রমা করে গৃহে গমন করেন কিছুক্ষণ পর এক ক্ষুধার্ত কুকুর সেখানে সে তুলসী দেবীর মূলে অবশিষ্ট জল পান করে কিন্তু তখন এক ব্যাধ এসে সেই কুকুরকে প্রশ্ন করল দুষ্ট কুকুর তুই কেন আমার বাড়িতে খাবার চুরি করেছিস। চুরি করেছিস ভালো কিন্তু মাটির হাঁড়িটি কেন ভেঙ্গে রেখে এসেছিস এখন আমি তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেব। তারপর ওই ব্যাধ ওই কুকুরটিকে তখন বধ করল। তখন ওই কুকুরটিকে যমদুতরা নিতে আসলো কিন্তু তৎক্ষণাৎ বিষ্ণুরদুতগণ সেখানে উপস্থিত হল। বিষ্ণুরদুতগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলো এই কুকুর পূর্ব জন্মে জঘন্য পাপ করার কারণে নানাবিধ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ছিল কিন্তু শুধু তুলসী তরুমূলের জল পান করার ফলে এর সমস্ত পাপ নাশ হয়েছে এমনকি সে বিষ্ণুলোকে গমনের যোগ্যতা অর্জন করেছে তারপর সেই কুকুরটি এক দিব্য দেহ লাভ করল এবংবিষ্ণুরদুতগণের সাথে বৈকুণ্ঠধামে গমন করল।
একটি অধম কুকুর যদি শুধুমাত্র তুলসী অর্পিত জল ভক্ষণ করার কারণে বৈকন্ঠ ধামে গমন করতে পারে তাহলে যদি কেউ ভক্তি ভরে তুলসী সেবা অর্থাৎ তুলসীতে জল দান, তুলসী রোপন, তুলসীদেবী কে প্রণাম করে তাহলে তার কি গতি হবে। এবং সেই তুলসী পত্র শ্রী হরি চরণে অর্পণ করে । ভগবান শিব বলেন যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে প্রতিদিন তুলসী মঞ্জরী দিয়ে শ্রী হরি আরাধনা করে এমনকি আমিও তার পূর্ণ বর্ণনা করতে অক্ষম।
তাই আপনারা তুলসী বৃক্ষ রোপন করবেন এবং প্রত্যহ তুলসী মহারানী কে প্রণাম, করবেন জল দান করবেন, তুলসী পরিক্রমা করবেন, তুলসী দেবীকে স্পর্শ করবেন এবং তুলসীপত্র দ্বারা শ্রী হরির প্রার্থনা করবেন। তবে আপনারা ভগবান শ্রী হরির অতীব প্রিয় পাত্র হয়ে উঠবেন হরে কৃষ্ণ।