বৈশাখ মাসের মাহাত্ম্য - কেন পলন করব বৈশাখ মাস। Baisakh mash mahatma
বছরের বারটি মাসের মধ্যে তিনটি মাস শ্রেষ্ঠ বৈশাখ মাস, কার্তিক মাস এবং মাঘ মাস। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কার্তিক মাস বা দামোদর মাস এবং বৈশাখ মাসকে শ্রেষ্ঠ মাস বলা হয়েছে। এই বৈশাখ মাসকে বলা হয়েছে ডিসকাউন্ট এর মাস। এই বৈশাখ মাস অনেক পূর্ণ ফল প্রদাতা এবং পাপনাশকারী একটি মাস। তাই এই মাসে যদি কেউ শ্রী হরির সেবার জন্য তুলসী সেবা করে থাকে তাহলে সে শ্রী হরির অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হন এবং অবশেষে তিনি ভগবানের কাছে ফিরে যান। তাই আজকের আলোচনার বিষয় বৈশাখ মাসের মাহাত্ম্য কথা নিয়ে।
বৈশাখ মাসের মাহাত্ম্য কথা-
১। নারদ মনি অম্বরিশ মহারাজের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, কার্তিক, মাঘ ও বৈশাখ মাস অন্য সব মাসে থেকে শ্রেষ্ঠ। আবার এই তিনটি মাসের মধ্যে বৈশাখ মাস প্রধান। জননী যেমন স্ব স্ব সন্তানের ইষ্ট দান করেন এই বৈশাখ মাসও তদ্রুপ নিখিল প্রাণীর শুভ দায়ক। (স্কন্ধ পুরাণের বিষ্ণু খন্ডের বৈশাখ মাহাত্ম্য- প্রথম অধ্যায়)
২। এই মাসে দান, যোগ্য, ব্রত ও স্নান করিলে সর্ব পাপ বিনষ্ট হয়। (প্রথম অধ্যায় বৈশাখ মাহাত্ম্য বিষ্ণু খন্ড স্কন্ধ পুরাণ)
৩। ধর্ম-যজ্ঞ ও ক্রিয়াদিতে এই বৈশাখই মাস সমূহের সার । (প্রথম অধ্যায় বৈশাখ মাহাত্ম্য বিষ্ণু খন্ড স্কন্ধ পুরাণ)
৪। বৈশাখ মাসে হবিষ্যভোজন( ভগবত প্রসাদ) ব্রহ্মচর্যানুষ্ঠান, ধরাশায়,ন ব্রত, স্নান, হরিপূজা, ইন্দ্রীয় সংযম অবশ্য কর্তব্য। (নারদ অম্বরে সংবাদ পাতাল খন্ড পদ্মপুরাণ।)
৫। বৈশাখে ব্রাহ্মণকে তিল, জল, স্বর্ণ, অন্ন, বস্ত্র, পাদুকা, গাভী, ছত্র দান করতে হয়। (নারদ অম্বরীস সংবাদ, পাতাল খন্ড, পদ্মপুরাণ) ।
৬। হরিপ্রিয় বৈশাখে দান, জপ, হোম ও প্রাতস্নান অক্ষয় পূণ্যস্বরুপ হয়ে থাকে। (নারদ অম্বরীস সংবাদ, পাতাল খন্ড, পদ্মপুরাণ) ।
৭। হে অম্বরিশ যে ব্যক্তি বৈশাখ মাসে নিয়মবান হয়ে প্রতিদিন প্রাতঃকালে স্নান করেন। মহা পূণ্যলাভার্থে তাদের দর্শন কর। আনন্দপুরে (তীর্থবিশেষ) কোটি বর্ষ বাস করলে যে ফল লাভ হয় বৈশাখে একবার প্রাতঃস্নান দ্বারা সেই ফল লাভ করা যায়। যথা নিয়মে বৈশাখে প্রাতঃস্নান করলে পাতকের পাপ ক্ষয় হয়। (নারদ অম্বরীস সংবাদ, পাতাল খন্ড, পদ্মপুরাণ) ।
৮। হে নর বৈশাখে তরুণোদয়ের পূর্বে স্নানরত হয়, তার প্রতি ভগবান অত্যন্ত প্রসন্ন হন। (স্কন্ধপূরাণ)।
৯। যে বৈশাখে প্রতিদিন প্রাতঃস্নান ও পূজা দি করে সে পা মুক্ত হয়ে বিষ্ণুসাজুয্য মুক্তি লাভ করে। (স্কন্ধপূরাণ)।
১০। যে মানুষ বৈশাখে প্রাতঃস্নানার্থ এক পাদ নিক্ষেপ করে তার অযুত (দশ হাজার) অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়। (স্কন্ধপূরাণ)।
১১। বৈশাখ মাসের তিল, ঘি শ্রীহরির প্রীতিবিধানার্থে দান করলে কোটি জন্মার যেত পাপের ক্ষয় হয়। (নারদ অম্বরীস সংবাদ, পাতাল খন্ড, পদ্মপুরাণ) ।
১২। মানব গণের শুভ কামনায় ভগবান বিষ্ণুর আদেশে বৈশাখ মাসে তীর্থাদিদেবগণ তীর্থ ভিন্ন সকল জলই আশ্রয় করে সর্বদা সন্নিহিত থাকেন। সূর্যোদয় হতে ছয় ঘটিকা পর্যন্ত তীর্থাদি দেবতাগণ জলে বাস করেন। যারা এই সময়ের মধ্যে স্নানার্থ আগমন না করে, তীর্থাদিদেবগণ তাদেরকে সদারুণ অভিসম্পাত প্রদান করে স্বস্থানে চলে যান। অতএব ওই সময় স্নান করাই কর্তব্য। (স্কন্ধপূরাণ)।
১৩। বৈশাখে ধনহীন ব্যক্তি যদি কেবলমাত্র পুষ্প দ্বারা শ্রী হরির অর্চনা করেন তাহলে অখিল পাতক হতে মুক্ত হয়ে তিনি শতসংখ্য পিতৃকুল পরিত্রানে সমর্থ হন। (স্কন্ধপূরাণ)।
১৪। যারা নানারূপ মধুর সামগ্রী দ্বারা শ্রী হরির অর্চনা করেন তারা উক্ত ফল অপেক্ষা অধিকতর ফলপ্রাপ্ত হন এবং শ্রী হরির প্রশ্নটা বিধান করেন। (স্কন্ধপূরাণ)।
১৫। যারা বৈশাখ মাসে মধুর দ্রব্য প্রধান আহারীয়, তিল, ছাত্র ,বারিপাত্র, বসন ও পাদুকা শুদ্ধ ব্রাহ্মণকে প্রদান করেন সেই দান দ্বারা শ্রী হরি ভীত থাকেন এতে যে পূর্ণ সঞ্চিত হয় শত কোটি বর্ষেও তা গণনা করে শেষ করা যায় না। (বরাহ পৃথ্বী সংবাদ পদ্মপুরাণ)।
তাই আপনারা এই বৈশাখ মাসে ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান, ভগবানের আরতি কীর্তন, বেশি করে হরিনাম জব, বৈষ্ণব সেবা, বৈষ্ণব সঙ্গ, তীর্থ ভ্রমণ, মন্দির বাস, শ্রীমদ্ভগবত গীতা, শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ এবং তুলসী সেবা করবেন এই বৈশাখ মাসে তুলসী জল দানেরএক বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে আমি তা পরবর্তীতে আলোচনা করব।