বৈষ্ণব অপরাধ কি? বৈষ্ণব অপরাধ কত প্রকার কি কি?
সাধু সাবধান, সাধু হও সাধু সেজোনা, ভক্তি জীবনে আসলে এমন অনেক কথা শুনে থাকি। ভক্তি জীবনকে ক্ষুরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। একটু অসাবধান হলেই কেটে যাবে। আবার ভক্তি জীবনকে সাদা কাপড়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাই এই সাদা কাপড়ে রঙ্গিন কিছু লাগলে তা এমনিতেই চোখে পড়বে।
বৈষ্ণব অপরাধ কি
তাই অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে আমাদের ভক্তি জীবন পালন করতে হয়। তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ যা ভক্তির জীবনের মস্ত বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন- নাম অপরাধ, ধাম অপরাধ, সেবা অপরাধ, এবং বৈষ্ণব অপরাধ এসব অপরাধ যেন না হয় সেদিকে খুব সাবধান থাকতে হয়।
এইসব অপরাধের মধ্যে বৈষ্ণব অপরাধ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ অপরাধ। আচার্যগণ এই বৈষ্ণব অপরাধ কে বিভিন্নভাবে আখ্যায়িত করেছেন। এই বৈষ্ণব অপরাধ কে হস্তি স্নানের সাথে তুলনা করেছেন। হস্তি জলে সুন্দরভাবে স্নান করলেও উপরে আসলে নিজেই নিজের শরীরে ধুলো লাগায়।
আবার এই বৈষ্ণব অপরাধ কে পাগল হস্তীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। একটি পাগল হস্তি যখন কোন সাজানো বাগানে প্রবেশ করে তখন সেই সাজানো বাগান নিমিষেই তছনছ করে দেয়। তাই ভক্তি জীবনে বৈষ্ণব অপরাধ থেকে খুবই সাবধান থাকতে হবে। তা না হলে আমাদের এই সাজানো ভক্তি জীবন নিমিষেই নষ্ট হয়ে যাবে।
আমরা যারা ভক্তি জীবন পালন করি আমাদের ভক্তির মাত্রা ডে বাই ডে উন্নতি লাভ করে। কিন্তু অনেকের ভক্তি জীবন থমকে দাঁড়ায়। তখন ভক্তি জীবন অনেকটা বিষের মতো লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় ভক্তি জীবনে এসে ভুল করেছি। ভগবানের নাম জপ করা, ভগবানের পূজা অর্চনা করা, গ্রন্থ অধ্যায়ন করা এসব কিছুতে আনন্দ আসে না। এই সব কিছুর পিছনে একটিই দায়ী সেটা হল বৈষ্ণব অপরাধ। তাই এই সকল অপরাধ থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে তবেই আমরা প্রকৃত আনন্দ লাভ করতে পারব।
বৈষ্ণব অপরাধের ফল শাস্ত্রে ভুরিভুরি প্রমাণ রয়েছে যেমন শ্রীবাসের চরণে অপরাধ করেছিল চপালগোপাল এই অপরাধের ফলে সে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল পরবর্তীতে সে শ্রীবাসের চরণে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে সেই কুষ্ঠ রোগ ভালো হয়ে যায়।
আবার দেখা যায় অম্বরিশ মহারাজের চরণে অপরাধ করেছিল দুর্বাসা মুনি। এই অপরাধের ফলে তিনি স্বর্গ -মর্ত্য এমনকি পাতালেও ঠাঁই পায়নি অবশেষে তিনি বৈকণ্ঠে বিষ্ণুর কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন তাতেও কোন লাভ হয়নি। পরিশেষে তিনি অম্বরিশ মহারাজের চরণে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে সেই অপরাধ খন্ডন হয়।
অজানা সত্ত্বেও বৈষ্ণব অপরাধ হয়ে থাকে যেমন রূপ গোস্বামীর অপরাধ হয়েছিল অষ্টবক্র মুনির চরণে যার ফলে রূপ গোস্বামী ভগবানের নীলা আর দেখতে পাচ্ছিল না। পরে সেই মুনির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তখন আবার রূপ গোস্বামী ভগবানের নীলা দেখতে পাচ্ছিল।
এমন হাজার হাজার প্রমাণ শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে তাই বৈষ্ণব অপরাধ থেকে আমাদের সবসময় দূরে থাকতে হবে
মহন্তের অপমান হয় যে দেশে
যে গ্রামে একের অপরাধে
সেই গ্রাম উজারিয়া যায়
চৌতান্য চরিতামৃত এ আছে,
যেখানেই কেউ বৈষ্ণব কে অপমানিত করবে সেখানেই সেই গ্রামের সমস্ত মানুষ, নষ্ট হয়ে যাবে বৈষ্ণব অপরাধে। বৈষ্ণব অপরাধ এমন মারাত্মক, যদি কেউ বৈষ্ণব অপরাধ করে তাকে হরিনাম সংকীর্তন, ভাগবত,এমনকি স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও বৈষ্ণব অপরাধ থেকে রক্ষা করতে না।
এমন কি কোনো দেব দেবীও করতে পারে না।
শাস্ত্রে ছয় (৬) প্রকারের বৈষ্ণব অপরাধের কথা বলা আছে যথা-
১:_বৈষ্ণব কে প্রহার (মারা) করা
২:_বৈষ্ণবের নিন্দা করা
৩:__বৈষ্ণবের প্রতি বিদ্বেষ (হিংসা) করা
৪:__বৈষ্ণবের প্রতি ক্রোধাম্বিত ( রেগে যাওয়া) হওয়া।
৫:_বৈষ্ণব দেখে প্রণাম না করা
৬:_বৈষ্ণব কে দেখে আনন্দিত না হওয়া
এই ছয় প্রকার বৈষ্ণব অপরাধের একটা করলেই সেই বৈষ্ণব অপরাধী। আর বৈষ্ণব অপরাধের ফল তার পতন নিশ্চিত। এমন কি তার সাথে তার বংশের সবাই কেই নরক গামী হতে হয়। কোটি, কোটি জন্ম তাদের রৌরব নরকে পচে মরতে হয়। তারা আর মানব জন্ম কোনদিন পায় না।
যেইদিন যেই সময় যে কেউ বৈষ্ণব অপরাধ করবে সেইদিন সেই ক্ষণ থেকেই শ্রী কৃষ্ণ আর তার পূজা গ্রহণ করে না এবং সেইদিন থেকেই তার বংশের পতন শুরু হয়ে যায়,কোটি ,কোটি জন্মের পুণ্য তার তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে যায়।
শাস্ত্রে আছে
হেনো বৈষ্ণব নিন্দা করে যেই জন
কৃষ্ণ ও তার পূজা না করে গ্রহণ।।
তাই সাবধান থাকা উচিৎ এই ছয় প্রকার বৈষ্ণব অপরাধ থেকে। যদি কখনো কারো বৈষ্ণব অপরাধ হয়ে যায় এবং আপনি যদি বুজতে পারেন তাহলে ততক্ষনাৎ সেই বৈষ্ণবের চরণে ক্ষমা প্রর্থনা করবেন কারন বৈষ্ণব অপরাধ তখনই খন্ডন হয় যে বৈষ্ণবের চরণে অপরাধ হয় সে যদি ক্ষমা করে দেয়।