দামোদর বা কার্তিক ব্রতের সংকল্প করার নিয়ম । দামোদর ব্রতের সংকল্প মন্ত্র, প্রার্থনা মন্ত্র, অর্ঘ মন্ত্র কি ।
অনেকে কার্তিক ব্রত বা দামোদর ব্রত করে থাকেন কিন্তু এই ব্রত শুরু করার আগে কিছু নিয়ম পালন করতে হয় সেটা আমাদের জানা উচিৎ। বিশেষ করে জানতে হবে সংকল্প করার নিয়ম। তাই আজকের আলোচনার বিষয় দামোদর ব্রতের সংকল্প করার নিয়ম । দামোদর ব্রতের সংকল্প প্রণাম মন্ত্র ।
দামোদরং প্রপদ্যেহহং শ্রীরাধারমণং প্রভুম্ ।
প্রভাবাদ্যস্য তৎপ্রেষ্ঠঃ কার্তিকঃ সেবিতো ভবেৎ
“কার্তিকমাসের অধিষ্ঠাতৃদেব শ্রীরাধিকাসহ শ্রীদামোদরের প্রপন্ন হই। যাঁর প্রভাবে তাঁর প্রিয়তম মাস কার্তিক মাস সেবিত হবেন।”
সর্বান্তকরণে ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারা ইন্দ্রিয়াধিপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবাই ভক্তি। কীভাবে সময়ের সর্বোচ্চ উপযোগ করে ভগবানের সেবা করা যায় সেটাই দামোদর ব্রতের সংকল্প হওয়া উচিত। তবে সর্বাগ্রে মনে রাখা উচিত, নিয়মগুলো (সংকল্প) যেন লোকদেখানো বা শুধুই নিয়মমাত্র থেকে না যায়। ব্রতের সময়সীমা পর্যন্ত যেন সেগুলো পালনযোগ্য হয়, সেটাও বিবেচনা করতে হবে। ভগবান তাঁর ভক্তকে মুক্তি অথবা সবরকম জাগতিক সুখ প্রদান করতে পারেন। কিন্তু দামোদর মাসে, বিশেষ করে মথুরায় ভগবদ্ভক্তি অনুশীলন করলে ভক্ত ভগবানের চরণে শুদ্ধভক্তি ছাড়া আর কিছু কামনা করেন না ।
দামোদর মাসের প্রথম দিনে মঙ্গলারতিতে যোগদান করে ভগবানের আরতি দর্শন করতে হয়। এরপর কোনো নদী বা জলাশয়ে, অথবা তা না থাকলে শ্রীবিগ্রহ সমীপে আচমনপূর্বক সংকল্প করতে হবে। এরপর ভগবানের নিকট প্রার্থনা করে অর্ঘ প্রদান করতে হয়।
আরো বলা হয়েছে, এই পরম পবিত্র দামোদর ব্রত মথুরা মণ্ডলে উদ্যাপন করা বিধেয়। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, কার্তিক মাসে মথুরায় শ্রীগোবিন্দের প্রীতি সর্বাধিক বর্ধিত হয়, তাই কার্তিক মাসে মথুরাতেই ভক্তির চরম ফল প্রাপ্ত হওয়া যায়। কার্তিকে মথুরাতে যমুনায় স্নান করে শ্রীদামোদরের পূজা করলে তারা কৃষ্ণসারূপ্যপ্রাপ্ত বলে জানতে হবে, এবিষয়ে বিচার কর্তব্য নয়। আরো উল্লেখ আছে, শ্রীদামোদরদের কার্তিকে মথুরামণ্ডলে মন্ত্র-দ্রব্যবিহীন বিধিবিহীন পূজাও স্বীকার করেন।
কার্তিকমাসে মধুরাতে উপহাস হলেও হরিপূজার মাধ্যমে দুর্লভ পদ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহলে ভক্তিযুক্ত হয়ে শ্রদ্ধার সাথে পূজা করলে যে কী ফল পাওয়া যায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থে শ্রীল প্রভুপাদ উল্লেখ করেছেন, ঐকান্তিকভাবে আগ্রহী না হলেও কেউ যদি কার্তিক মাসে মথুরায় ভগবদ্ভক্তি অনুশীলন করেন, তাহলে তিনিও ভগবদ্ভক্তি লাভ করেন। ব্রতের সময় ভক্তদের কর্তব্য ভগবানের মন্দিরে বাস করা, এর মাধ্যমে মথুরায় ব্রত পালনের ফল লাভ করা যায়। গৃহে প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের সেবা-পূজা করা এবং সকলে মিলে হরিনাম সংকীর্তন করা।
হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
হরিজাগরণং প্রাতঃস্নানং তুলসীসেবনম্।
উদ্যাপনং দীপদানং ব্ৰতান্যেতানি কার্তিকে !
অনুবাদঃ রাত্রিশেষে হরি জাগরণ,প্রাতঃস্নানং, তুলসীসেবন, দীপদান শেষে উদযাপন উৎসব, কার্তিকে এই সকল ব্রত। সম্পূর্ণ কার্তিক মাসে ব্রতকারী এই পাঁচটি ব্রতের অঙ্গ পালনের মাধ্যমে শ্রীবিষ্ণুর সারুপ্য লাভ করেন। হরিভক্তিবিলাস (১৬/৯২) .
ব্রতের সংকল্প
হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে–
কার্তিকেহইয়ং করিষ্যামি প্রাতঃস্নানং জনার্দন ।
প্রীত্যর্থং তব দেবেশ দামোদর ময়া সহ !
অনুবাদঃ হে জনার্দন, হে দেবেশ, হে দামোদর, শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করব। হরিভক্তিবিলাস (১৬/১৭২)
প্রার্থনা মন্ত্র
তব ধ্যানেন দেবেশ জলেহস্মিন স্নাতুমুদ্যতঃ।
তপ্ৰসাদাচ্চ মে পাপং দামোদর বিনশ্যতু !
অনুবাদঃ হে দেবেশ, তোমার ধ্যান করে আমি এই জলে স্নান করতে উদ্যত, হে দামোদর, তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ হোক। হরিভক্তিবিলাস (১৬/১৭৩)
অর্ঘ মন্ত্র
ব্রতিনঃ কার্তিকে মাসি স্নাতস্য বিধিবন্মম।
দামোদর গৃহাণার্ঘ্যং দনুজেন্দ্রনিসূদন !
নিত্যে নৈমিত্তিকে কৃৎস্নে কার্তিকে পাপশোষণে।
গৃহাণার্ঘ্যং ময়া দত্তং রাধয়া সহিতো হরে !
অনুবাদ: নিত্যনৈমিত্তিক সময় পাপশোষণকারী কার্তিক মাসে ব্রতী আমি বিধিবৎ স্নানকারী, হে দামোদর, হে দনুজেন্দ্রনিসূদন, হে হরে, আমার প্রদত্ত অর্থ রাধিকাসহ গ্রহণ কর। হরিভক্তিবিলাস (১৬/১৭৪-৭৫)