একাদশী কি ? একাদশী পালনের নিয়মাবলি । পঞ্চ রবিশস্য কি কি?

একাদশী কি ? একাদশী পালনের নিয়মাবলি । পঞ্চ রবিশস্য কি কি?

একাদশী কি… 

একাদশী একটি চান্দ্র তিথি। চাদের শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথি, সনাতন ধর্মমতানুসারে পুণ্যতিথি হিসেবে বিবেচিত।সনাতন ধর্মে যে সকল উপবাস রয়েছে তার থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই একাদশী ব্রত উপবাস তাই এই একাদশী ব্রত অবশ্য পালনীয়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তার লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই " একাদশী উপবাসের " প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। শ্রীল জীব-গোস্বামী তার ভক্তিসন্দর্ভ গ্রন্থে স্কন্ধ পুরানের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, "যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী, সে যদি বৈকুণ্ঠ লোকেও উন্নীত হয়, তবুুুুও তার অধঃপতন হয়। 

যে সকল একাদশী বিশেষ মাহাত্যপূর্ণ   

বিষ্ণুর শয়ন, পার্শ্ব পরিবর্তন ও উত্থান একাদশী এবংআষাড়, ভাদ্র, কার্তিক ও বৈশাখ মাসের শুক্লা একাদশী বিশেষ শুভপ্রদ গণ্য করা হয়। ভৈমী একাদশী ও মাঘের  শুক্লা একাদশীকেও বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। নিয়মিত একাদশী পালন শরীরের পক্ষেও উপকারী। তাই স্বাস্থ্যগত কারণেও অনেকে প্রতি মাসে দুটি একাদশী তিথি পালন করেন। 

একাদশী পালনের নিয়মাবলি 

প্রথমে আমাদের জানতে হবে একাদশী উপবাস কথার অর্থ কি? একাদশী তিথি অর্থাৎ হরিবাসর তিথি যা স্বয়ং ভগবান ! উপবাস কথার অর্থ হল (উপ+বাস) উপ কথার অর্থ নিকটে বাস করার অর্থ বাস করা অর্থাৎ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট বাস করা এক কথায় একাদশীর মূল কাজ হল– নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা। তাই আপনারা যে নিয়মে, যে সময়ে পালন করুন না কেন, ভগবানকে ভক্তিভরে স্মরণ করাই যেন আপনারই মূল কাজ হয়।  

একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মগুলো হলো: 

১। সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, ও দ্বাদশীতে একাহার করতে হবে । 

২। তা হতে অসমর্থ পক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার। 

৩। যদি উহাতেও অসমর্থ হন, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করে ফলমূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে। 

সমর্থ পক্ষে রাত জাগরণের বিধি আছে, গৌড়ীয় ধারায বা আচার্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা (জল ব্যতীত) পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন, সেগুলি সেই মতে পালন করলে সর্বোত্তম হয়। নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় থেকে নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলা সহ অন্যান্য একাদশীতে কিছু — সবজি, ফলমূলাদি গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন — গোল আলু, মিষ্টি আলু, চাল কুমড়ো, পেঁপে, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি ,সূর্যমুখী তেল অথবা বাদাম তেল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন। হলুদ, মরিচ, ও লবণ ব্যবহার্য। আবার অন্যান্য আহার্য, যেমন — দুধ, কলা, আপেল, আঙুর, আনারস, আখ, আমড়া শস্য, তরমুজ, বেল, নারিকেল, মিষ্টি আলু , বাদাম ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূলাদিও খাওয়া যেতে পারে। 

 

□ একাদশীতে পাঁচ প্রকার  রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছেঃ—  

১। ধানজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন –চাউল, মুড়ি ,চিড়া,  সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খৈ ইত্যাদি। 

২। গমজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন –  আটা ময়দা সুজি, বেকারির রুটি বা সকল প্রকার বিস্কুট, হরলিক্স 

৩। যব বা ভুট্টাজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি। 

৪। ডালজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন —মুখ, মুখ, মাসকলাই, খেসারি, মসুরি,ছোলা, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি। 

৫। সরিষার তেল সয়াবিন তেল তিলের তেল ইত্যাদি। উপর্যুক্ত পঞ্চ রবিশস্যের যেকোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।    

বিঃ দ্রঃ একাদশীতে শ্যামা চাল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ! 

 

উল্লেখ্য: যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং  চা বিড়ি/ সিগারেট পান কপি ইত্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কাল পর্যন্ত এগুলি গ্রহণ না করাই ভালো। 

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, একাদশী করলে যে কেবল নিজের জীবনের সদ্গতি হবে তা নয়। একাদশী পালন করা ব্যক্তির প্রয়াত পিতা/মাতা যদি নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই (একাদশী ব্রত) পিতা–মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে। একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নরকবাসী হবে, অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে। 

□  একাদশী পারণঃ (একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর নিয়ম) পঞ্জিকাতে একাদশী পারণের (উপবাসের পরদিন সকালে) যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে নিবেদন করে, প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত দরকার। নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হবে না। একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের নাম স্মরণ, মনন, ও শ্রবণ কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয় । এদিন যতটুকু সম্ভব উচিত । একাদশী পালনের  পরনিন্দ পরচর্চা, মিথ্যা ভাষণ, ক্রোধ দুরাচার, স্ত্রী  সহবাস সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। 

□  বিঃ দ্রঃ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়ঃ — একাদশী ব্রতের আগের দিন রাত ১২ টার আগেই অন্ন ভোজন সম্পন্ন করে নিলে সর্বোত্তম। ঘুমানোর আগে দাঁত মাজা। 

  • রাতে ব্রাশ করে দাঁত ও মুখগহবরে লেগে থাকা সব অন্ন পরিষ্কার করে নেওয়া সর্বোত্তম। সকালে উঠে শুধু মুখ কুলি ও স্নান করতে হয়। 
  • একাদশীতে সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোথাও কেটে না যায়। একাদশীতে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়। দাঁত মাজার সময় অনেকের রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। তাই একাদশীর আগের দিন রাতে দাঁত ভালোভাবে মেজে নেওয়াই সমীচীন। 
  • একাদশীতে চলমান একাদশীর মাহাত্ম্য ভগবদ্ভক্তের শ্রীমুখ হতে শ্রবণ অথবা সম্ভব না হলে নিজেই ভক্তি সহকারে পাঠ করতে হয়। 
  • যারা একাদশীতে একাদশীর প্রসাদ রান্না করেন, তাদের পাঁচফোড়ন ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিৎ, কারণ পাঁচফোড়নে সরিষার তৈল ও তিল থাকতে পারে যা বর্জনীয়। 
  • একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ। তৈল (শরীরে ও মাথায়) সুগন্ধি, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি বর্জনীয়। 
  • সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম — দাড়ি-গোঁফ করা এবং চুল ও নখ কাটা নিষিদ্ধ। 

 

 

হরে কৃষ্ণ আপনাদের সকলকে জানাই অনেক কৃষ্ণ প্রীতি শুভেচ্ছা আপনারা যারা একাদশী ব্রত পালন করেন তাদের জন্য এই ভিডিওটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা যারা একাদশী করি অনেক বিষয়গুলো এড়িয়ে চলি যার কারণে একাদশীতে অনেক সমস্যার দেখা যায় এবং কি একাদশী পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে আসুন দেখে নেয়া যাক সেই বিষয়গুলো কি কি?