জগন্নাথের কাছে প্রেমপত্র লেখার কাহিনী। জগন্নাথের কাছে প্রেমের চিঠি

জগন্নাথের কাছে প্রেমপত্র লেখার কাহিনী। জগন্নাথের কাছে প্রেমের চিঠি

    জগতের নাথ জয় জগন্নাথ আসলে জগন্নাথ কে কতটা কৃপাময় এবং ভক্তদের কৃপা আশীর্বাদ করার জন্য এবং পতিত জীবদের উদ্ধার করার জন্য তার এই অবতার তার প্রমাণ জগন্নাথের বিভিন্ন নিলা থেকে আমরা বুঝতে পারি জগন্নাথ তার ভক্তের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত তার একটি প্রমাণ এখন আলোচনা করব।

 

একবার পুরীর এক পান্ডা মহাপ্রসাদ নিয়ে জয়পুরের মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে গেল। রাজা ও রানী মহাপ্রসাদ পেয়ে খুব খুশী। এদিকে রাজকন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া তার মহলে মহানন্দে জগন্নাথ দেবের জন্য একটি চিঠি লিখলেন ও পান্ডা টি বিদায় নেওয়ার সময় একটি রত্ন পেটিকা দিয়ে বললেন এটি যেন সে পুরী ফিরে গিয়ে জগন্নাথ দেব কে অর্পন করে এবং বিদায়ের সময় কিছু স্বর্নমুদ্রা পারিতোষিক হিসেবে দেওয়া হল। 

 

আনন্দিত মনে পান্ডা পুরী ফেরার পথে ভাবল নিশ্চয়ই ওই পেটিকাতে বেশ কিছু রত্নরাজি আছে যা রাজকুমারী তাকে দিয়েছেন জগন্নাথ দেব কে দেওয়ার জন্য এবং সেই মুহূর্তে তাকে লোভ গ্রাস করল এবং ওর মনে হল যদি ও এই রত্ন নিজের কাছে রেখে দেয় তাহলে কেউ জানতে পারবে না কারন কেউ প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই। 

 

    যা ভাবা তাই কাজ। পান্ডা পেটিকা খুলে 

    দেখল সেখানে একটুকরো কাগজ রাখা আছে!

 

 পান্ডা তখন ভাবল সে বোকামি করেছে এতদূর পথ এই পেটিকাটিকে শুধু শুধু বয়ে নিয়ে আসতে, তাই কাগজের টুকরোখানা সে ছিঁড়ে ফেলল। সেই রাতেই জগন্নাথদেব দর্শন দিয়ে  তাকে বললেন,"মূর্খ,তুই তোর পারিশ্রমিক পেয়েছিলি,তবে যে কাজ করবি বলে স্বীকৃত হয়ে এসেছিলি,সে কাজ করিসনি কেন? 

 

আমার জন্য যে চিঠি তুই পথের মাঝে ছিঁড়ে ফেলেছিস তার চেয়ে মূল্যবান সম্পদ আমার রত্নভান্ডারে নেই।কাল সকালে মন্দিরে গিয়ে দেখিস আমি সেই পত্র কে কোথায় স্থান দিয়েছি!"

 

▪️পরেরদিন সকালে পান্ডাটি মন্দিরে গিয়ে দেখল ছেঁড়া চিঠি মোড়া হয়ে জগন্নাথের বুকের হারের পদকের সঙ্গে আটকানো রয়েছে। 

 

উপস্থিত অন্যান্য পান্ডারা কেউই যখন এর রহস্য বুঝতে পারছিল না তখন দোষী পান্ডাটি সব কথা স্বীকার করে ভগবানের কাছে বারংবার ক্ষমা চাইতে লাগল। 

 

সেবকরা চিঠিটি খুলে দেখল রাজকুমারী একটি অপূর্ব শ্লোক লিখেছেন। লেখা আছে-

 

"রত্নাকরস্তব গৃহং গৃহিনী চ লক্ষ্মী

কিং দেয়মস্তি ভগবতে পুরুষোত্তমায়।

আভীরগোপললনাহৃতমানসায়

দত্তং মনস্তদনু মে কৃপয়া গৃহাণ।"

 

শ্লোকটির অর্থ হল"শ্রীক্ষেত্রে গিয়ে সকলেই তোমাকে কিছু না কিছু দেয়।আমিও ভেবেছি আমার ভালোবাসার নিদর্শন হিসাবে তোমাকে কিছু না কিছু দেওয়া উচিত।কিন্তু তোমাকে কি দেব সেটাই ঠিক করতে পারছিলাম না। 

 

তুমি রত্নাকরে শয়ন কর,তাই রত্নের কোন অভাব নেই তোমার।তাই সে জিনিষ তোমায় দেওয়া যাবে না।স্বয়ং লক্ষ্মী তোমার গৃহিনী তাই কোনও ধনের প্রয়োজন তোমার নেই।তাহলে তোমাকে কি দিতে পারি? অনেক ভেবে দেখলাম তুমি যখন বৃন্দাবন থেকে মথুরা চলে গেলে তখন ▪️গোপীরা তোমার মনটি চুরি করে নিয়েছিল।ঐ একটি জিনিষের তোমার অভাব আছে। সেই অভাব পূরণ করার জন্য আমার মন আমি তোমায় দিলাম,কৃপা করে গ্রহন করো।

 

এই ভাবেই সকল ভক্ত হৃদয়ের ঐকান্তিকী কামনা ফুটে উঠেছিল রাজকুমারী বিষ্ণুপ্রিয়ার চিঠিতে আর তিনিও সদা সর্বদা হয়ে রইলেন ভক্তের ভগবান। তাঁর দুটি প্রসারিত বাহু ভক্তকে চির আলিঙ্গনে বাঁধতে চায়।

 

তাই জগন্নাথ কে যদি কেউ ভালোবাসার জন্য একটু এগিয়ে যায় জগন্নাথ তার সেই ভালোবাসার জন্য তার চেয়ে দশ গুণ এগিয়ে আসে তাই আমাদের সকলের উচিত জগন্নাথের এই বিশেষ কৃপা লাভ করার জন্য জগন্নাথের যে কোন সেবায় অংশগ্রহণ করা।  জয় জগন্নাথ