কে কে এবং কারা এই একাদশী পালন করতে পারবে। একাদশী সংকল্প মন্ত্র এবং একাদশী পারণ মন্ত্র-
হরে কৃষ্ণ- সনাতন ধর্মের যত তিথি রয়েছে তার থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ তিথি হল এই ‘‘একাদশী তিথি’’। একাদশী অর্থাৎ একাদশ শব্দ থেকে একাদশী শব্দটি এসেছে। একাদশ মানে হল একাদশ দিন। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার যে একাদশ তম দিন সেই দিনে একাদশী ব্রত পালন করতে হয়। এবং এই একাদশী পালন করার জন্য শাস্ত্রে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই একাদশী পালনের জন্য শত শত মাহাত্ম্য রয়েছে।
‘‘পদ্ম পুরাণের উত্তর খন্ডে’’ বলা হয়েছে নিখিল বর্ণ নিখিল আশ্রম কিংবা স্ত্রী জাতি সকলেরই একাদশি ব্রত পালন করতে হবে অর্থাৎ সে স্ত্রী জাতি হোক বা যেকোনো বর্ণ বা আশ্রমের হোক সকলকেই এই একাদশী ব্রত পালন করতে হবে। এবং কেত্যায়ন ও নারদ পুরানে বর্ণিত হয়েছে ৮ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে সকলেরই এই একাদশী ব্রত পালন করতে হবে। কারণ আপনি যদি এই একাদশী ব্রত পালন না করেন আর সেদিন যদি আপনি পঞ্চরবিশ্বাস্যর যেকোনো একটি গ্রহণ করেন। তাহলে প্রতি গ্রাসে আপনাকে পাপ ভক্ষণ করতে হবে। আপনাকে তো পাপ ভক্ষণ করতেই হবে তথাপি পিতৃহত্যা, মাতৃহত্যা, গুরু হত্যা, ভ্রূণ্য হত্যা জনিত পাপও ভোগ করতে হবে আপনি এইসব পাপ করলেন না তবুও এই একাদশীতে অন্য ভক্ষণ করার ফলে আপনাকে এসব পাপ ভোগ করতে হবে। কারণ একাদশীর দিনে পাপ পুরুষ এই পঞ্চ রবিশস্যের ভিতরে অবস্থান করেন। তাই আমাদের সকলের উচিত দৃঢ় নিষ্ঠার সহিত এই একাদশী ব্রত পালন করা।
আমরা অনেকেই শাস্ত্রের এই বর্ণিত একাদশী ব্রতের কথা জানি অথবা না জেনেই একাদশী ব্রত পালন করি আবার অনেকেই একাদশী ব্রত পালন করিনা তাই আমাদের উচিত যারা এই একাদশী সম্পর্কে জানেনা তাদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া ।
আমরা যারা একাদশী ব্রত পালন করি অনেকেই শাস্ত্রের নিয়ম না মেনেই করে থাকি। আমাদের সকলের উচিত শাস্ত্রের বর্ণিত যে নিয়ম ঠিক সেই রকম ভাবে আমাদের এই একাদশি ব্রত পালন করা।
প্রত্যেক অমাবস্যা ও পূর্ণিমার যে একাদশ দিন সেই দিনে একাদশী ব্রত পালন করতে হয়। আর এই একাদশ দিনের আগের দিন দশমীর দিনে আমরা যে এই একাদশী ব্রত পালন করব তার জন্য সংকল্প করতে হয়। আমরা অনেকেই একাদশীর জন্য যে সংকল্প মন্ত্র করতে হয় তা জানিনা এবং কিভাবে সংকল্প করতে হয় তাও জানিনা তাই নিচে আলোচনা করা হলো একাদশী সংকল্প মন্ত্র এবং কিভাবে এই সংকল্প করবেন।
একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমীর দিনে নিরামিষ গ্রহণ করতে হবে যারা প্রসাদভোজি তাদের তো কোন কথাই নেই যারা প্রসাদভোজি না তারা দশমীর দিনে চেষ্টা করবেন নিরামিষ আহার গ্রহণ করার। অথবা সেদিন আপনারা ভগবানের জন্য রান্না করে ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে সেই প্রসাদ পেতে পারেন এবং এই দশমীর দিনে আপনাদের সংকল্প করতে হবে। তিনবার এই সংকল্প মন্ত্র উচ্চারণ করে সংকল্প করতে হবে। তাই দশমীর দিন সকালবেলা অর্থাৎ প্রাতকালে ভগবান শ্রী হরির চরণে পুষ্প নিবেদন করে এই সংকল্প মন্ত্র উচ্চারণ করবেন।
একাদশী সংকল্প মন্ত্রঃ
একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ শরণং মে ভবাচ্যুত।।
সরলার্থঃ- হে পুন্ডরিকাক্ষ, হে অর্জুত, আমি একাদশীতে উপবাস পূর্বক পরদিন আহার করব। আপনি মদীদি ও শরণস্থান হোন।
আরও জানুন-
গীতা মাহাত্ম্যে উল্লেখ্য আছে-
যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে
স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন স হীয়তে।।
সরলার্থঃ- শ্রীবিষ্ণুর পূর্বদিনে, একাদশী ও জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন। তিনি চলুন বা দাঁড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন, যে অবস্থায় থাকুন না কেন শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারে না।
একাদশী পারন মন্ত্রঃ-
একাদশ্যাং নিরাহারঃ ব্রতে নানেব কেশব
প্রসিদ সুমূখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টি প্রদো ভব।।
সরলার্থঃ- হে কেশব আমি আপনার কৃপা দৃষ্টিতে নিরাহার ভাবে একাদশী ব্রত পালন করেছি কৃপা পূর্বক আমার উপর আপনার করুণাময় জ্ঞানদৃষ্টি প্রদান করুন।