অক্ষয় তৃতীয়া মাহাত্ম্য - অক্ষয় তৃতীয়া কথার অর্থ : Akshaya Tritiya Mahatma
অক্ষয় তৃতীয়া কথার অর্থ-
অক্ষয় তৃতীয়া কথার অর্থ হলঃ- ( অক্ষয়+ তৃতীয়া ) অক্ষয় অর্থাৎ যার কোন ক্ষয় নেই। আর তৃতীয় কথাটির অর্থ হল -চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথি। এই অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনটি বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ।
বছরের 365 দিনের মধ্যে চারটি দিন শ্রেষ্ঠ তথা- অক্ষয় তৃতীয়া দিন। , বিজয়া দশমী দিন। , বৈশাখ মাসের প্রথম দি,ন এবং কার্তিক মাসের প্রথম দিন। এই চারটি দিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন।
এই অক্ষয় তৃতীয়া এমন একটি তিথি যে তিথিতে আপনি সকল প্রকার শুভ কাজ করতে পারবেন। এবং যেকোনো প্রকার মঙ্গলজনক কাজ শুরু করতে পারবেন। এই তিথিতে দশবিধ সংস্কার যেমন- নামকরণ, বিবাহ, অন্নপ্রাশন, হাতে খড়ি ইত্যাদি সকল প্রকার সংস্কার করতে পারবেন। আবার এই দিনে জমি ক্রয় করতে পারবেন নতুন গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন এবং স্বর্ণ ক্রয় করতে পারবেন নিঃসন্দেহে এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে আপনি যা কিছু কাজই করে থাকেন না কেন সবকিছুই অক্ষয় হিসেবে থেকে যাবে। আপনি যদি এই দিনে ভগবানের আরতি অর্চন করেন তাহলে সেগুলিও অক্ষয় থেকে যাবে। শুধু ভালো কাজেই থেকে যাবে তা নয় যদি আপনি এই দিনে অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার এই তিথিতে কোন খারাপ কাজ করে থাকেন তাহলে সেটাও অক্ষয় হিসেবে থেকে যাবে । তাই আমাদের খুবই সাবধানতার সহিত এই তিথি পালন করতে হবে।
অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য কথা-
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনটি বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ কারণ এই দিনটিতে অনেকগুলো শুভ কর্ম সংঘটিত হয়েছে। যার ফলে এই দিনটিতে যা কিছু করা হয় তার শুভ অর্থাৎ অক্ষয় থেকে যায় আসুন দেখা যাক এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে কি কি শুভ কর্ম সংঘটিত হয়েছে।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার ভগবান পরশুরামের জন্ম হয়েছিল। তাই অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনটি ভগবান পরশুরামের আবির্ভাব তিথি।
এই অক্ষয় তৃতীয়া দিনে মহাভারত রচনা আরম্ভ হয়েছিল। আর এটি আরম্ভ করেছিল মহা মুনি বেদব্যাস এবং সিদ্ধিদাতা গনেশ। মহা মুনি বেদব্যাস বলেছিলেন এবং গণেশ তা লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে সত্যযুগ এবং ত্রেতা যুগের শুরু হয়েছিল। মৎস্যপুরাণ এবং হরি ভক্তি বিলাসে উল্লেখ্য রয়েছে অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে থেকে সত্যযুগের শুরু হয়েছিল। এবং পদ্মপুরাণে উল্লেখ্য রয়েছে সত্য যুগ শেষে ত্রেতা যুগের শুরু হয়েছিল এই অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে।
এই দিনে পঞ্চপান্ডব তথা দ্রৌপদী অক্ষয় পাত্র লাভ করেছিলেন। মহারাজ যুধিষ্ঠির সূর্যদেবের কাছে প্রার্থনা করলে ভগবান সূর্য নারায়ন মহারাজ যুধিষ্ঠির কে একটি অক্ষয় পাত্র দান করেন এই অক্ষয় তৃতীয়ার তিথিতে।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে পরমেশ্বর ভগবান “যব” সৃষ্টি করেছিলেন। “যব” হল পঞ্চ রবিশস্যের একটি শস্য ।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে মহারাজ ভগিরথ মা গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন তার পূর্বপুরুষদের উদ্ধার করার জন্য।
এক সময় কুবের ভগবান শিবের আরাধনা করেন। এবং অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে ভগবান শিব কুবেরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে প্রচুর পরিমাণ ধন সম্পদ প্রদান করেন।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিন থেকে পুরীধামে রথযাত্রা উপলক্ষে রথের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে চার ধাম যথা কেদারনাথ, বদ্রিনাথ, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী ধাম ৬ মাস বন্ধ থাকে। এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে সবার দর্শনের জন্য এই চার ধামের দড়জা উন্মোচন করা হয় এবং দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়প্রদীপ যা ছয় মাস আগে জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিন থেকে ভগবানকে চন্দন লেপন করা হয়। অর্থাৎ এই দিন থেকে চন্দন যাত্রা শুরু হয়।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে পঞ্চপান্ডবের স্ত্রী তথা দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ থেকে রক্ষা করেছিলেন।
অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার বন্ধু সুদামার দারিদ্রতা দূর করেছিলেন।
যেহেতু এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে সবকিছু অক্ষয় থেকে যাবে তাই আপনারা এই দিনে বেশি বেশি ভগবত কর্ম অর্থাৎ ভগবত ভক্তি উন্নতির যে কর্ম যেমন শাস্ত্র গ্রন্থ অধ্যয়ন, ভগবানের আরতি অর্চন, ভক্ত সংঘ ,তীর্থ দর্শন ,এবং বৈষ্ণব সেবা ,কৃষ্ণ কথা পাঠ শ্রবণ এগুলোতে এই দিনটি অতিবাহিত করবেন এবং বেশি বেশি করে হরিনাম জপ করবেন ।
(Akshaya Tritiya)