পুরীধাম রক্ষা করেন কে? অষ্টমহাবীর কে? Jagannath Puri Dham
এই জগতের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র জায়গা হল শ্রীজগন্নাথ পুরীধাম। তাই ভগবান শ্রীহরি কখনো এইস্থান পরিত্যাগ করেন না। এই পুরীধাম ভগবান কিভাবে রক্ষা করেন এবং তাদের উপর এই ভার অর্পণ করেছেন সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়ঃ
স্কন্দপুরাণে ভগবান নিজেই বলেছেন-
"সত্যং সত্যং পুনঃ সত্যং সত্যমেতদ্ ব্রবীমি তে।
প্রাসাদভঙ্গে তদস্থানং ন ত্যজামি কদাচন।।"
আমি ত্রিসত্যপূর্বক বলছি যে, এমনকি আমার মন্দির বিধ্বস্ত হলেও আমি স্থান পরিত্যাগ করি না।
অষ্ট শম্ভুর (শিব) সাথে সাথে অষ্ট মহাবীর (হনুমান) পুরী ধাম রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন।
শঙ্খক্ষেত্র পূর্ব হতে পশ্চিম দিকে বিস্তৃত। এর মস্তক অবস্থিত পশ্চিম দিকে, যেখানে লোকনাথ মহাদেব অবস্থিত। স্কন্দক্ষেত্রের পূর্বভাগে নীলকন্ঠ মহাদেব বিরাজিত। স্কন্দক্ষেত্রের উদরভাগ মহাসাগরতলে অবস্থিত। এই শঙ্খাকৃতি ক্ষেত্রের শেষভাগে শ্রীনীলকন্ঠেস্বর মহাদেব বিরাজ করছেন।
শঙ্খক্ষেত্রের দ্বিতীয় আবর্তে কপালমোচন মহাদেব বিরাজমান । তৃতীয় আবর্তের সীমানায় আদ্যাশক্তি জগন্মাতা বিমলা বিরাজ করছেন । শঙ্খক্ষেত্রের নাভি-রূপ ভূভাগে রোহিণী কুন্ড ও কল্পবট অবস্থিত। রোহিণী কুন্ডের তটভাগে ভগবান স্বয়ং বিরাজমান।
এই ক্ষেত্রে অর্দ্ধাশিনী দেবীও বিরাজ করছেন । এই দেবীর নাম অর্দ্ধাশিনী, কেননা প্রলয়কারে তিনি অর্ধ্বেক পরিমাণ জল পান করেছিলেন ।
বিভিন্ন পুরাণে শ্রীক্ষেত্র বা পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন স্কন্দপুরাণ, ব্রহ্মপুরাণ, বামদেব সংহিতা, কপিল সংহিতা, পদ্মপুরাণ এবং লীলাদ্রি পুরাণ প্রভৃতি।
এই মহাবীরগণ হচ্ছেন যথা-
১)সিদ্ধ মহাবীর
২)দরিয়া মহাবীর
৩)কানপাতা মহাবীর
৪)বর্গী হনুমান
৫)মসনী মহাবীর
৬)পঞ্চমুখী মহাবীর
৭)ফতে মহাবীর এবং
৮)শিরুলী মহাবীর।
️শ্রীমন্দিরের সুরক্ষার জন্য হনুমান মন্দিরের চার পার্শ্বে পাহারা দিচ্ছেন। সিংহদ্বারে (জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান প্রবেশ পথ-
>>পূর্ব দ্বারে রয়েছেন ফতে হনুমান,
>>পশ্চিম দ্বারে রয়েছেন বীর বিক্রম হনুমান,
>>উত্তর দ্বারে রয়েছেন তপস্বী হনুমান এবং
>>দক্ষিন দ্বারে রয়েছেন কানপাতা হনুমান ও বড়ভাই হনুমান।
কান পাতাহনুমান-
এই হনুমানের একটি সুন্দর কাহিনী রয়েছে। মহাসাগরের তীরে জগন্নাথ মন্দির অবস্থিত। সমুদ্র মন্থনের সময় লক্ষ্মীদেবী আবির্ভূত হন এবং ভগবান তাঁকে বিবাহ করেন। সাগর-কন্যাকে বিবাহ করার ফলে ভগবান সাগরের জামাতা হলেন, এবং মহাসাগর হলেন শ্রীজগন্নাথদেবের শ্বশুর।
রাত্রিতে মহাসাগরের তরঙ্গমালা একটি জোরালো শব্দ করে যা সারা পুরীতে শোনা যায়। একসময় এই তরঙ্গ-শব্দ শ্রীজগন্নাথদেবের মন্দিরে প্রবেশ করে এবং জগন্নাথের নিদ্রায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। শ্রীজগন্নাথদেব সমুদ্রকে আদেশ করেন এমন কোনো শব্দ না করতে যা তাঁর নিদ্রায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
️ কিন্তু সমুদ্র তা শুনলো না বরং তাঁর শব্দতরঙ্গ আরো বাড়িয়ে দিল। তখন জগন্নাথ হনুমানকে খবর দিল এবং বলল যাতে সমুদ্রের শব্দ মন্দিরে না আসে সেই ব্যবস্থা করতে।
তখন হনুমান তার ডান কান পাতালেন সমস্ত শব্দ তরঙ্গ নিজের কানে ঢুকালেন। সেই থেকে তটভূমিতে সমুদ্রের তরঙ্গ-ভঙ্গের শব্দ আর কখনো জগন্নাথের মন্দিরে প্রবেশ করেনি।
শ্রীজগন্নাথ তাঁর ভক্ত হনুমানকে দক্ষিন দ্বারে পাহারায় নিয়োজিত করে বলেন যে, সে যেন সবসময় সতর্কভাবে সমুদ্রের ধ্বনির দিকে মনোযোগ রাখে এবং কোনো শব্দ যেন মন্দিরে প্রবেশ না করতে পারে তা নিশ্চিত করে।
কানপাতা শব্দের অর্থ কানকে শব্দ শ্রবণে নিরত থাকা। সেজন্য এই দ্বারে পাহারারত হনুমানকে বলা হয় কানপাতা হনুমান।
বেড়ি হনুমান
পুরী ধামে চক্রতীর্থের কাছে বেড়ি হনুমান মন্দির অবস্থিত। এখানে হনুমানের মূর্তি একটি বেড়ি দিয়ে আবদ্ধ করা হয়েছে। শ্রীজগন্নাথদেব হনুমানকে পুরীধাম রক্ষায় নিয়োজিত করেন, কেননা কখনো কখনো সমুদ্রের তরঙ্গ পুরীতে প্রবেশ করত এবং পুরীবাসীকে ভুগতে হত।
সেজন্য জগন্নাথদেবের দ্বারা হনুমান এখানে পাহারায় নিযুক্ত হন যাতে সমুদ্র পুরী শহরে প্রবেশ করতে না পারে হনুমান তা দেখবেন।
একবার হনুমানের অযোধ্যা পরিদর্শনের জন্য ইচ্ছা হল। সুতরাং পুরীধাম পাহারার দায়িত্ব ফেলে ঐস্থান ত্যাগ করে হনুমান অযোধ্যা গেলেন। ফলে সমুদ্রের জল শহরে প্রবেশ করল এবং শহরবাসীদের খুব ভোগান্তি হতে লাগল।
শ্রীজগন্নাথদেব হনুমানকে অযোধ্যা থেকে ফিরিয়ে আনলেন। তাঁকে এখানে বেড়ি দিয়ে আবদ্ধ করে রাখলেন এবং তাঁকে আজ্ঞা দিলেন যে, কখনো যেন সে এ-স্থান ছেড়ে না যায় এবং দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করে।
যেহেতু হনুমান পুরী ধামকে মহাসাগর থেকে সুরক্ষিত রাখতে দরিয়ার (মহাসাগর) নিকটে অবস্থান করছেন, সেজন্য তিনি দরিয়া হনুমান নামেও খ্যাত।
বর্গী হনুমান
জগন্নাথ মন্দিরের পশ্চিম দিকে লোকনাথ রোডে বর্গী হনুমান মন্দির অবস্থিত । পূর্বে বর্গীরা (মহারাষ্ট্রের এক জনজাতি) এই পথ দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে যেত, এর ফলে শ্রীমন্দিরে ও পুরীর মানুষদের মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি হত । এই বর্গীরা হনুমানের ভক্ত, সেজন্য তাদের পুরী প্রবেশ বন্ধ করতে এই অঞ্চলে একটি হনুমান মূর্তি মন্দিরে স্থাপন করা হয় ।
বর্গীরা হনুমান মূর্তি অতিক্রম করে যেতে অনিচ্ছুক ছিল, সেজন্য এইভাবে মহারাষ্ট্রের দুর্ধর্ষ বর্গীদের আক্রমণ থেকে পুরী রক্ষা পেয়েছিল ।