পুরীধামের মাহাত্ম্য । জগন্নাথ পুরী মন্দিরের বিভিন্ন নাম। Puri dham mahatma

পুরীধামের মাহাত্ম্য । জগন্নাথ পুরী মন্দিরের বিভিন্ন নাম। Puri dham mahatma

 স্কন্ধ পুরাণে উল্লেখ্য রয়েছে ব্রম্মা থেকে আগত বংশ পরম্পরা ধারায় ২৫ তম পুরুষ হলেন ইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজ তিনি ছিলেন ভগবান জগন্নাথ দেবের অত্যন্ত প্রিয়ভক্ত। ভগবানের আদেশ অনুসারেই তিনি গড়ে তুললেন একটি মন্দির শ্রীক্ষেত্রে। এখন আমরা তাকে চিনি  জগন্নাথ পুরিধাম রূপে। আজকে আমরা আলোচনা করব সেই পুরী ধামের মাহাত্ম্য কথা নিয়ে এবং পুরি ধাম কি কি নামে খ্যাত। 

 

পুরী ধামের মাহাত্ম্য কথাঃ-

         স্কন্ধপুরাণে (উৎকলখন্ড) উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ জগন্নাথ পুরীর পরিধি ১০ যোজন (৮০ মাইল বা ১২৮ কিঃমিঃ) অবধি বিস্তৃত এবং বালুকাময় ভূভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ স্থান উড়্রদেশ বা উড়িষ্যা নামেও খ্যাত। শাস্ত্রে উৎকল দেশকে এ গ্রহের পবিত্রতম স্থান বলে বর্ণনা করা হয়েছে ।

 

ব্রহ্মান্ড পুরাণে বলা হয়েছেঃ

           বর্ষাণাং ভারতশ্রেষ্ঠঃ দেশানাং উৎকলঃ স্মৃতঃ।

           উৎকলস্য সমদেশো দেশো নাস্তি মহীতলে।।

 

   অর্থাৎ “সমস্ত বর্ষসমূহের মধ্যে ভারতবর্ষ শ্রেষ্ঠ । সমস্ত দেশের মধ্যে উৎকল দেশ বা উড়িষ্যা শ্রেষ্ঠ। এই গ্রহে উৎকল দেশ বা উড়িষ্যার মতো অন্য কোনো দেশ নেই।”

 

      উড়িষ্যারপুরীধাম উৎকল নামে খ্যাত। এটি রুশিকুল্য নদী ও মহানদীর মধ্যবর্তী প্রদেশে অবস্থিত পূর্বে এটি উৎকল নামে পরিচিত ছিল। স্কন্দপুরাণে উৎকল প্রদেশের মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। ঐ পুরাণ অনুসারে, দক্ষিণ মহাসাগরের তটদেশে স্থিত উৎকল পরম পবিত্রকারী স্থান।সমগ্র রাজ্য জুড়ে বহু মন্দির ও তীর্থ বিরাজিত।

 

      ️উৎকল দেশে বসবাসকারী জনগন সদাচারে দৃষ্টান্তস্থানীয়। সেখানকার ব্রাহ্মণগণ সর্বদাই শাস্ত্র অধ্যয়ণ ও যজ্ঞ সম্পাদনে নিরত। সৃষ্টির শুরুতে যজ্ঞকর্ম ও বেদপাঠ উৎকল হতে উদ্ভব হয়েছিল।এই প্রদেশে অষ্টাদশ বিদ্যার মহাসাগর স্বরুপ বলে বিবেচিত ।

 

     শ্রীনারায়ণের আজ্ঞায় উড়িষ্যার প্রতি গৃহে লক্ষ্মীদেবী বিরাজ করেন। এই রাজ্যের জনগন অত্যন্ত বিনীত ও স্বভাবগত ভাবে লজ্জায়ন। তাঁরা রোগ-ব্যাধি ও মনোবিকার হতে মুক্ত। তাঁরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের পিতামাতার সেবা করে থাকেন। তাঁরা অত্যন্ত সত্য পরায়ণ এবং বিষ্ণুর প্রতি ভক্তিমান। উৎকলের মানুষ অপরকে সহ্য করা ছাড়াও  নানা কল্যান মূলক র্কম করে তৃপ্তি লাভ করেন। লোভ, দৃষ্টিভাব ও প্রতারণা সেখানে অনুপস্থিত।

 

      ️একসময় উৎকলের জনগন ভগবৎ-কৃপায় অত্যান্ত দীর্ঘায়ু ছিল। নারীগণ ছিল পতিনিষ্ঠ,ক্ষত্রিয়গণ সাধারণ মানুষকে রক্ষারুপ স্বর্ধম আচারণ সর্বদা নিয়োজিত থাকতেন। তারা অত্যন্ত দানব্রতশীল ও যুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন তারা প্রচুর যজ্ঞের আয়োজন করতেন এবং এ জন্য প্রচুর দক্ষিণা প্রদান করতেন। যখন উৎকলদেশের এই রকম ক্ষত্রিয়ের গৃহে কোন অতিথিদের সমাগম হত, তাঁরা সেই অতিথিদেরকে তাদের আশাতীত বহু বহু উপকারে পরিতুষ্ট করতেন। 

 

বৈশ্যগণ কৃষিকর্মে, গোরক্ষা ও বাণিজ্য সুন্দরভাবে নিয়োজিত থাকতেন । তাঁরা তাদের ভক্তি ও ঐশ্বর্যের দ্বারা সর্বদা ভগবান ,গুরুদেব ও ব্রাহ্মণগণের সেবা করতেন। কোনও ভিখারী উৎকলের কোনও বৈশ্যের গৃহে গেলে সে এত ভিক্ষা পেত যে তাঁর আর অন্যের গৃহে যাবার প্রয়োজন হত না।

 

     ️উৎকলের শুদ্রগণ গীতবাদ্য, কলাবিদ্যা ও শিল্পকর্মে অত্যন্ত সুনিপণ ছিল। তাঁরা অত্যন্ত বাগ্নী, সুবক্তা ছিল। তাঁরা ছিল ধার্মিক ও দান পরায়ণ এবং সর্বদাই তাদের কায়িক শ্রম, মন, বাক্য এবং ধনসম্পদ দ্বারা তাঁরা ব্রাহ্মণগণের সেবা করত। এমনকি বর্ণসংকর গণও তাঁদের পদমর্যাদা অনুসারে ধর্মাচরণ করত।

 

     পূর্বে, বড় ঋতুর পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাব ক্ষেত্রে কোন অসামঞ্জস্য ঘটত না। অসময়ে বৃষ্টিপাত হত না। বৃষ্টির জলে বা প্লাবনে কখনো শস্যাদি নষ্ট হত না। বায়ু কখনো মানুষকে নির্যাতন করত না এবং কেউই ক্ষুধায় কষ্ট পেত না। পৃথিবীতে যা কিছু পাওয়া যায় উৎকলে তা সবই সুপ্রাপ্য ছিল।

 

জগন্নাথ পুরীর বিভিন্ন নাম 

     পুরীধামঃ পুরী শব্দের অর্থ হচ্ছে বসবাসের স্থান। যিনি পুরী ধামে বাস করেন, তাকে বলা হয় পুরুষ। শ্রী জগন্নাথ হচ্ছেন পরমপুরুষ। পুরীধাম এমন এক স্থান যেখানে পরম পুরুষ ভগবান বাস করেন। শ্রী জগন্নাথের উপস্থিতির কারনে এখানকার সবকিছুই পূর্ণ।

 

    পুরুষোত্তম ক্ষেত্রঃ পুরী-ধাম পুরুষোত্তম ক্ষেত্র নামে খ্যাত। শ্রী জগন্নাথ হচ্ছেন পুরুষোত্তম। এই স্থানের প্রতি অত্যন্ত প্রীতিশীল হয়ে তিনি তাঁর নিজ নামানুসারে এই স্থানের নামকরন করেন। এই ধাম স্বয়ং ভগবান হতে অভিন্ন।

 

   ভূস্বর্গঃ পুরী-ধাম এই ধরণীর স্বর্গ নামে খ্যাত।

 

 

   শ্রীক্ষেত্রঃ এই স্থান যদিও বিষ্ণুর ক্ষেত্র, তবুও এই দিব্য স্থান লক্ষ্মী দেবীর দ্বারা প্রভাবান্বিত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সিদ্ধান্ত অনুসারে পুরীধাম শ্রীমতী রাধারাণীর মাধুর্য্যভাবের দ্বারা সম্পৃক্ত।

 

   শঙ্খ_ক্ষেত্রঃ পুরীধামের ভৌগলিক আয়তন শঙ্খের মতো। উড়িষ্যার পবিত্র ভূমি চারটি ক্ষেত্রে বিভক্ত। এই ক্ষেত্রগুলির নামকরন হয়েছে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর হস্তধৃত চারটি অস্ত্র-

শঙ্খ, চক্র,গদা ও পদ্মের নামানুসারে। 

 

>>ক) পুরীধাম শঙ্খ ক্ষেত্র নামে পরিচিত।

>>খ) ভুবনেশ্বর চক্র ক্ষেত্র।

>>গ) যাজপুর গদা ক্ষেত্র এবং

>>ঘ) কোনারক হচ্ছে পদ্ম ক্ষেত্র।

 

   শ্রীনৃসিংহ_ক্ষেত্রঃ স্কন্ধপুরান অনুসারে পুরী ধাম নৃসিংহ ক্ষেত্র নামে খ্যাত। 

 

এভাবে পর্যায়ক্রমে জগন্নাথ পুরী ধামের বিভিন্ন মহিমা এবং পরিধামে জগন্নাথের বিভিন্ন লীলা সমূহ তুলে ধরার চেষ্টা করব। এতে আমার যদি কোন ভুল ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আপনারা আমাকে অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের সবার চরণে আমার শত কোটি প্রণাম।