পুষ্প অভিষেক কি ? ভগবানকে কেন পুষ্প অভিষেক করানো হয়। Puspa Abhishek ki?

পুষ্প অভিষেক কি ? ভগবানকে কেন পুষ্প অভিষেক করানো হয়। Puspa Abhishek ki?

পুষ্প অভিষেক নাকি পুষ্য অভিষেক-  

      পুষ্প অভিষেক নাকি পুষ্য অভিষেক এ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে আসলে এটি কি পুষ্প অভিষেক নাকি পুষ্য অভিষেক আসুন শাস্ত্রে কি বলছে তা জেনে নেই।  

 

     পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলার মধ্যে এটি একটি লীলা। ভগবানের প্রতিটি লীলার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে তার ভক্তদের আনন্দ দেয়া। আমরা ভক্তেরা যাতে করে ভগবানের সন্নিকটে যেতে পারি অর্থাৎ প্রতিটি নীলার মাধ্যমে ভক্তরা ভগবানের সন্নিকটে যেতে পারে।  

 

     শাস্ত্রে বলা হয়েছে পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পুষ্য নক্ষত্রে ব্রজ গোপীকারা শ্রীকৃষ্ণকে বিভিন্ন রঙের ফুল দিয়ে পত্রাদি দিয়ে সজ্জিত করেছিল আর সেদিন এত পরিমান ফুল শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করেছিল যা কৃষ্ণের গলদেশ অব্দি পৌঁছে গিয়েছিল তাই এই দিনটি সারা পৃথিবীতে ভগবানের পুষ্প অভিষেক বা পুষ্য অভিষেক হিসেবে পালন করা হয ।  

, বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রতিটি ইসকন মন্দিরে এই দিনে ভগবান শ্রী রাধা মাধবকে বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে অভিষেক করানো হয় এবং মন্দিরগুলো পুষ্প দ্বারা সজ্জিত করা হয়।   

 

 আবার প্রশ্ন হতে পারে যে বর্তমানে মাঘ মাস তাহলে পৌষ মাস আসলো কোথা থেকে  দেখুন বাংলা মাস এবং ইংরেজি মাস অনুযায়ী তিথি ,পূজা, পার্বণ, উপবাস, ব্রত গণনা করা হয় না। এসব গণনা করা হয় বিশুদ্ধ চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী।  

   

ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ এবং হরিপত্তিবিলাসে উল্লেখ্য রয়েছে পুত্রদা একাদশীর 5 দিন পরে পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথি এবং তারপরে মাঘ মাস শুরু হয়।  আবার   

 মর্যাদাপুরুষোত্তম ভগবান শ্রীরামচন্দ্র পৌষ মাসের শুক্লপক্ষে অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন এবং রাজ্য অভিষেক হয়েছিল এবং স্বর্ণ মুকুট ধারণ করেছিল সেই অনুসারে ভারতবর্ষে অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন করা হলো পৌষ মাসের শুক্ল পক্ষের উত্তরায়ণে সেই রাম মন্দিরের উদ্বোধন আমরা সবাই দর্শন করে ছিলাম।   

 

পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পুষ্যা নক্ষত্রে এই অভিষেক হয়েছিল তাই একে পুষ্যাভিষেক বলে। এইদিন নানা রঙ্গের ফুল দিয়ে শ্রী শ্রী রাধামাধবকে অনেক আড়ম্বরপূর্ণভাবে অভিষেক করে বলে অনেকে পুষ্পাভিষেকও বলে।  

 

অভিষেক মানে ভগবানকে অভিষেক করার কথা বলা হয়েছে এই দিন কি শুধু পুষ্পদারা অভিষেক করানো হয় নাকি অন্য কিছু দ্রব্যাদি দ্বারা অভিষেক করানো হয় সেই মতে  হরিভক্তিবিলাসে উল্লেখ্য রয়েছে-  

          ঘৃত প্রস্থেন দেবেশং পৌষপুষ্যসিতে নরঃ  

          স্নাপয়িত্বাশ্বমেধস্য ফলমাপ্নোত্যসংশয়ম্  

অনুবাদঃ পৌষ মাসে দুঃসা সমন্বিত পূর্ণিমাতে প্রস্তাবিত পাশের ঘৃত দ্বারা দেব দেব হরিকে স্নান করালে নিঃসন্দেহে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়        হরিভক্তিবিলাস ,১৪/১০  

 

অর্থাৎ এই পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পশ্য নক্ষত্রে যদি কেউ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ধৃত দ্বারা অভিষেক করাতে পারেন তাহলে সে অসমের যজ্ঞের ফল লাভ করবেন এখানে পাশের ঘি এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে এটি কারো পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে বিশেষ করে যারা গৃহ অবস্থান করছেন কিন্তু যদি তারা অল্প পরিমাণ হলেও দ্বারা ভগবানকে অভিযোগ করান তাহলে সে এই অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করবেন। শুধুমাত্র যে ফল্লাফের জন্য ভগবানকে কৃতদ্বারা অভিষেক করাবেন তা নয় ভক্তেরা কখনো ফলের আশা করে না তাই আমাদের উচিত ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য সকল কার্য করা। যেহেতু এই দিনে ব্রজগোপী কারা ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য ভগবানকে পুষ্পদারা সু-সজ্জিত করেছিলেন তাই আমাদের সকলের উচিত শুধুমাত্র ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই ভগবানকে বিভিন্ন রঙের ফুল ধরা অভিষে করানো । এছাড়াও আপনারা পঞ্চগব্য দিয়ে অভিষেক করাতে পারেন কিন্তু বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্পদ্বারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অভিষেক করানো । তাই আমাদের সকলের উচিত এই দিনে নানা রঙ্গের ফুল দিয়ে ভগবান কৃষ্ণকে সুসজ্জিত করা এবং ভগবান কৃষ্ণকে অধিক পরিমাণ ফুল নিবেদন করা ।  

 

পুষ্পাভিষেক কেন পালিত হয়-  

স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে পুষ্যাভিষেক যাত্রা মূলত শ্রীপুরী জগন্নাথ মন্দিরের দ্বাদশ যাত্রার একটি, এই তিথিতে শ্রীদারুব্রহ্মের বিজয় বিগ্রহ শ্রীমদনমোহনের বিশেষ অভিষেক, শৃঙ্গারাদি হয়ে থাকে, সে থেকেই পুষ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এখন সেটাকে কেন্দ্র করেই শ্রীশ্রীরাধা-মাধবের এদিনে পুষ্প শৃঙ্গার ও অভিষেকাদি হয়ে থাকে।  

 

   ব্রজলীলায় এইদিন ব্রজগোপীগণ পরম আদরে শ্রীশ্রীরাধা-শ্যামসুন্দরকে বহুবিধ বনফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন।  

 

  রাধা-কৃষ্ণের নিত্য চিন্ময় সেবা সুখ বৃদ্ধিই ব্রজ গােপীকাদের একমাত্র মনোবাঞ্ছা। যুগল স্বরূপের আনন্দ বর্ধনই তাদের প্রাত্যহিক কর্ম। ব্রজগোপীরা এইদিন ব্রজেশ্বরী রাধারাণী ও প্রাণনাথ শ্যামসুন্দরকে নানা রং ও গন্ধের পুষ্প ও মাল্য দিয়ে এত পরিমাণ সাজিয়েছিলেন যেন, তারা তাদের নিজের সৌন্দর্যকেই ভুলে যান।  

অযোধ্যার নাগরিকগণও ভগবান শ্রী রামচন্দ্রকে পুষ্পবৃষ্টি করে অযোধ্যাতে স্বাগত জানিয়েছিলেন।   

 

কৃষ্ণ যখন কোন অসুরকে নিধন করতেন তখন কৃষ্ণের বন্ধুরা পুষ্প বৃষ্টি করে তাঁকে স্বাগত জানাতেন।  

 

দ্বারকায়ও শ্রীকৃষ্ণকে পুষ্প বৃষ্টি করে দ্বারকাবাসীরা স্বাগত জানিয়েছেন।  

 

 

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় ৯/২৬ বলা হয়েছে -  

   পত্রং পুষ্পং ফলং তুয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি  

    তদহং ভক্ত্যুপহুতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ  

অনুবাদঃ যে বিশুদ্ধ চিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র ,পুষ্প ফল ও জল অর্পণ করেন আমি তার সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি ।  

 

শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন-আপনি যখন ভক্তি ও প্রীতি সহকারে ভগবানকে একটি পুষ্প নিবেদন করবেন তখন আপনি অনুভব করতে পারবেন ভগবান আপনার নিবেদিত পুষ্প গ্রহণ করেছেন এবং শ্রীবিগ্রহের হাস্যোজ্জল মুখমণ্ডলে আপনি দর্শন করতে পারবেন।