রথযাত্রা উৎসবের অর্থ কি? রথযাতা উৎসবে অংশগ্রহণ করার মাহাত্ম কি? Rattha Yattra Utsov ki

রথযাত্রা উৎসবের অর্থ কি? রথযাতা উৎসবে অংশগ্রহণ করার মাহাত্ম কি? Rattha Yattra Utsov ki

সারা পৃথিবীতে পালিত হচ্ছে জগন্নাথ বলদেব এবং সুভদ্রা মহারানীর শুভ রথযাত্রা মহোৎসব। কিন্তু আমরা কি জানি, এই রথযাত্রা মহোৎসব এর উৎপত্তি কবে থেকে এবং এই রথযাত্রা উৎসবে অংশগ্রহণের মাহাত্ম্য কি এটাই আজকের আলোচনার বিষয়-

 

রথযাত্রা উৎসবের অর্থ

      বৃন্দাবন ত্যাগ করে মহারাজ নন্দ সূত শ্রীকৃষ্ণ তার দ্বারকা লীলায় রত হলেন। সুর্যগ্রহণ উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণ যখন কুরুক্ষেত্রে গিয়েছিলেন তখন তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলরাম ও ভগিনী সুভদ্রা এবং দ্বারকা থেকেই অনেকেই তার সঙ্গে গিয়েছিলেন। সেই সময় ব্রজবাসীগণও সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে কুরুক্ষেত্রে গিয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্রে বৃন্দাবনের গোপ গোপীদের সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাত হল। 

 

      ব্রজবাসীগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার বাল্য লীলাস্থলী বৃন্দাবনে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। ব্রজবাসীগণ শ্রীকৃষ্ণকে রাজ বেশে দেখতে চাইলেন না । তারা শ্রীকৃষ্ণকে বৃন্দাবনের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ব্রজের বেশে দেখতে চাইলেন এবং তার সাহচর্য পেতে উন্মুখ হলেন। তখন ব্রজবাসীগণ কৃষ্ণ, বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীর রথের ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই রথ টানতে টানতে বৃন্দাবনে নিয়ে গেলেন। 

 

      যাই হোক, সেই লীলাকে স্মরণ করে ভক্তরা আজও পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা জগন্নাথ দেবকে রথে করে টেনে বৃন্দাবনে (গুন্ডচা মন্দিরে) নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। দ্বারকা রাজ্যে যেমন শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্য লীলার স্থান বৃন্দাবন তেমনি মাধুর্য লীলার স্থল। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) এর প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল প্রভুপাদ হলেন শ্রীকৃষ্ণের একজন শুদ্ধ ভক্ত এবং তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভূর সংকীর্তন আন্দোলন প্রচারের উদ্দেশ্যে। 

 

      শ্রীল প্রভুপাদ পৃথিবীর প্রায় সমস্ত নগরাদি গ্রামে রথযাত্রা উৎসব পৌঁছে দিয়েছেন। হাজার হাজার ভক্ত লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্ক, সানফ্যান্সিসকো, সিডনী, কোলকাতা বিবিধ শহরে বিপুল উৎসব উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে রথযাত্রা উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। শ্রী প্রভুপাদের দ্বারাই শ্রী মন্মহাপ্রভুর বিশেষ উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে এবং তাঁর প্রচেষ্টায় আজ জাতি, ধর্ম,বর্ণ, নারী- পুরুষ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষ রথযাত্রার মতো শুদ্ধ ভগবদ সেবায় মেতে উঠেছে।

 

       জগন্নাথদেব শুধু পুরীতেই নয় বরং পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশে তার দিব্য রথে ভ্রমণ করেছেন। তিনি হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। ভগবদ্গীতায় নিশ্চিত করা হয়েছে যে, যেখানে কৃষ্ণ বা জগন্নাথ, জগতের নাথ এবং তার ভক্ত বিরাজমান সেখানেই বিজয় অনিবার্য

 

 রথযাতা উৎসবে অংশগ্রহণ করার মাহাত্ম 

 

      এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার মানে হলো আত্মোপলব্ধির পথে এক ধাপ অগ্রসর হওয়া। রথযাত্রা শ্রীকৃষ্ণের একটি অন্যতম লীলা। তাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার অর্থ হলো সরাসরি কৃষ্ণের সংস্পর্শে আসা। যারা মন্দিরে এসে ভগবানকে দর্শন করেন না, তাদেরকে দর্শন দেওয়ার জন্য ভগবান জগন্নাথদেব ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে নিজেই পথে বের হন। 

 

      রথোপরি ভগবান জগন্নাথদেবের শুধুমাত্র একবার দর্শনেই জন্ম-মৃত্যুর পুনরাবর্তন রোধে অগ্রগতি লাভ হয়। কেউ যদি রথের রশি ধরে টানে বা রথ স্বর্শ করে অথবা ঐদিন রাথোপবিষ্ট বিগ্রহকে দর্শনও করে তাহলে তার মুক্তি সুনিশ্চিত। বিগ্রহ সূহের শ্রীবৃন্দাবনে প্রত্যাবর্তন কালে পরামানন্দদায়ক ভাবাবেশের           ফলেই এরুপ হয়ে থাকে। আমরা প্রত্যেকেই আত্মারূপে জীবদেহের মাধ্যমে পরিভ্রমণ করি। এই জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে অব্যাহতি লাভ করতে হলে আমাদের হৃদয়ে গুপ্ত কৃষ্ণভক্তিকে পুনর্জাগ্রত করতে হবে। 

 

      পরিণামে আমাদের প্রত্যেককেই ভগবানের কাছে ফিরে যেতে হবে-এটাই পূর্বনির্ধারিত। কিন্তু তবুও আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সাহায্যের জন্য ভগবান শাস্ত্র এবং অনেক পথনির্দেশক শুরু পাঠিয়েছেন, কিন্তু আমরা তাঁদের কথায় যথেষ্ঠ মনোযোগ দিই না। বিশ্বের প্রধান প্রধান প্রতিটি ধর্মই ভগবানের নামের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। বিশেষ করে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র, বার বার জপ করলেই ভগবানের নাম জপ হয়ঃ

 

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

 হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে    

                                                        (কলিসন্তরণ উপনিষদ) 

 

     ভগবানের নাম এবং ভগবান অভিন্ন। সুতরাং তাঁর নামোচ্ছারণ করলেই ভগবানের সান্নিধ্য লাভ করা যায়। কলি যুগের মানুষের আত্মোপলব্ধির পথে শাস্ত্র নির্দেশিত সর্বাপেক্ষা উন্নত পদ্ধতি হল এই নাম জপ 

 

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম।

কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যতা

 

         (কলিসন্তরণ উপনিষদ) ভগবানের পবিত্র নাম উচ্চারণের মাধ্যেমে তাঁকে মহিমান্বিত বা সন্তোষ্ট করা ছাড়া অন্য কোন উপায় এই কলিযুগে নেই। সকল প্রামাণিক শাস্ত্রের এটাই হল নির্দেশ। এছাড়া এযুগে আর অন্য কোন উপায় নেই, অন্য কোন উপায় নেই, অন্য কোন উপায় নেই ।

 

 বিঃদ্রঃ বিস্তারিত জানার জন্য ইস্কন থেকে প্রকাশিত শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের প্রকাশ গ্রন্থটি পড়ুন।

 

রথযাতা মাহাত্ম্য