স্নানযাত্রা কি? কেন জগন্নাথকে ১০৮ কলসি দিয়ে স্নান করানো হয়। Snana Yatra ki ?

স্নানযাত্রা কি? কেন জগন্নাথকে ১০৮ কলসি দিয়ে স্নান করানো হয়। Snana Yatra ki ?

আমরা অনেকেই প্রশ্ন করে থাকি স্নানযাত্রা কি আর কেনই বা জগন্নাথ, বলদেব, সভদ্রা এবং সুদর্শন চক্রকে স্নান করানো হয় । আর এই স্নানযাত্রা কবে থেকে কোথায় এবং কখন কিভাবে শুরু হয়েছে সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়ঃ   

 

     জৈষ্ঠ্য মাসের পূর্ণিমা তিথির মহেন্দ্রক্ষনে জগন্নাথকে স্নান করানোর যে আয়োজন সেটিই হচ্ছে স্নানযাত্রা। আবার এই তিথিতে জগন্নাথ আবির্ভূত হন বলে এই দিনটিকে জগন্নাথের আবির্ভাব দিনও বলা হয় এবং এই দিনে জগন্নাথের স্নানযাত্রা মহোৎসব পালন করা হয়।  

 

    স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন মহারাজ যখন জগন্নাথদেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন তখন থেকেই শুরু হয় এই স্নান যাত্রা উৎসব। অর্থাৎ এই দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয় সমগ্র পুরীধামে। এই কারনে দেবস্নানা পূর্ণিমার পূর্ণময় তিথি এবং স্নানযাত্রা উৎসব প্রভু জগন্নাথের সকল ভক্ত তথা বৈষ্ণবদের জন্য একটি অত্যন্ত শুভ দিন। এদিন জগন্নাথ দেবের দর্শন করলে  সমস্ত পাপ বিনাশ হয়। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণই পুরীতে জগন্নাথ বা দারুব্রহ্ম রূপে অবস্থান করেন।  

 

jagannath snanyattra
 

জগন্নাথকে স্নান করানাের কারন :      

   প্রথম মন্বন্তরে ব্রহ্মার পুত্র স্বায়ম্বুব মনু তিনি ভগবানকে দর্শন করার মানষে এক বিশেষ যজ্ঞ করেছিলেন। সেই স্বায়ম্বুব মনুর প্রার্থনায় ভগবান সন্তুষ্ট হয়ে এই জৈষ্ঠ্য মাসের পূর্ণিমা তিথিতে সেই যজ্ঞবেদীতে আবির্ভূত হন। এবং দর্শন দান করেন। সেই দিন জগন্নাথ আদেশ প্রদান করেছিলেন যে তোমরা সকলে মিলে শত সহস্র কলসি দ্বারা সুগন্ধি, স্নিগ্ধ, শীতল জল ধরা দিয়ে আমাকে অভিষেক করাও তাহলে তোমাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণ হবে। তোমাদের মন প্রাণ শুদ্ধ হবে এবং তোমাদের মন প্রাণের যে শুদ্ধ হবে তা নয় তোমরা সকল পাপ থেকে মুক্ত হবে। ভগবান জগন্নাথের এই নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে স্বায়ম্বুব মনু  সহ সকলেই ভগবান জগন্নাথ কে স্নান করানোর উদ্দেশ্যে শত সহস্র জলপূর্ণ কলুষি দ্বারা স্নানযাত্রার আয়োজন করেন।  

 

    আবার স্কন্ধ পুরাণে উল্লেখ্য রয়েছে ব্রহ্মা থেকে আগত বংশ পরম্পরায় ২৫ তম পুরুষ ইন্দ্রদুম্ন মহারাজ তিনি ছিলেন ভগবান জগন্নাথ দেবের অত্যন্ত প্রিয়ভক্ত এবং ইন্দ্রদুম্ন মহারাজকে ভগবান জগন্নাথ দেব আদেশ প্রদান করে  বলেছেন তার বিগ্রহ স্থাপনের জন্য । তার চতুর্ধাম মূর্তি, দারু ব্রহ্মমূর্তি, জগন্নাথ বলদেব, সুভদ্রা এবং সুদর্শন এই চতুর্ধাম মূর্তি স্থাপনের জন্য ভগবান জগন্নাথ ইন্দ্রধন মহারাজকে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন ভগবানের নির্দেশ মতে চতুর্ধাম মূর্তি স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি মহা অভিষেকের আয়োজন করেছিলেন এবং সেটিও ভগবানের আদেশ অনুসারে। তিনি যেন ১০৮ কলসি জলধারা দিয়ে ভগবান জগন্নাথের  অভিষেক করান। সেই থেকে মহারাজ ইন্দ্রধনু জগন্নাথের মহা-সমারোহে স্নানযাত্রার আয়োজন করতেন।   

 

     জগন্নাথের স্নানের জন্য তিনি অনেক উঁচুতে রত্নবেদী তৈরি করেছিলেন। সেই বেদীতে ভগবানকে অধিষ্ঠিত করে স্নানযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করেন। এই স্নানযাত্রা লক্ষ লক্ষ ভক্ত দর্শন করতেন শুধু যে ভক্তরাই দর্শন করতেন তাই নয় এ স্নানযাত্রা মহোৎসব দর্শন করার জন্য স্বর্গের দেব-দেবী গণ আসতেন মানুষের রূপ ধারণ করে এবং সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবছর অর্থাৎ সত্যযুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত শ্রী ক্ষেত্র পরিধানে পালন হয়ে আসছে ভগবান শ্রী জগন্নাথ বলদেব সুভদ্র সুদর্শন স্নানের যাত্রা।   

 

         বর্তমানে আমরা দেখি ইসকন কর্তৃক আয়োজিত  পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে জগন্নাথ, বলদেব, সুভ্রদ্রা এবং সুদর্শন এর স্নানযাত্রা তথা রথযাত্রা এবং বিভিন্ন ফেস্টিবলের আয়োজন করে আসছে তাই আপনারা এই মহতী অনুষ্ঠানে আপনার পাশে থাকা ইসকন মন্দিরে এসে শ্রী জগন্নাথদেবের বিশেষ কৃপা লাভ করতে পারেন।   

 

      স্কন্দপুরাণ অনুসারে ,, পুরী রাজ ইন্দ্রদুম্ন জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার প্রবর্তক। এই দিন দারুব্রহ্মকে স্নান করানো হয় বলেই এর নাম দেবস্নানা পূর্ণিমা। এটি বৈষ্ণবদের জন্য একটি অত্যন্ত শুভ দিন।   

 

     স্কন্দ পুরাণে পুরুষোত্তম ক্ষেত্র মাহাত্ম্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, “জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমায় শ্রী হরির স্নানযাত্রা দর্শনের মাধ্যমে অনায়াসেই জীব মুক্তি লাভ করতে পারে। এমন কি কেউ যদি ভক্তি সহকারে একবারও স্নান যাত্রা মহোৎসব দর্শন করেন, তাঁর সংসার বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ সুনিশ্চিত হয়ে যায়। তাকে আর শোক করতে হয় না।   

 

       জৈমিনি ঋষি স্নান যাত্রার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন ভগবান পুরুষোত্তমের স্নানযাত্রা দর্শন করলে সমস্ত তীর্থ সমূহে স্নান করার থেকেও শতগুণ অধিক ফল প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং এতে কোনো সংশয় নেই।  

 

     স্কন্দপুরাণে জৈমিনি ঋষি আরোও বলেছেন    “যদি কেউ আন্তরিকতার সাথে স্নান কালে ভগবানকে নিরীক্ষণ করে, তাদেরকে আর মাতৃগর্ভে বাস করতে হয় না। উৎসুকতাপূর্ণ হৃদয়ে স্নানযাত্রা দর্শন করলে জীবগণ ভবসাগর থেকে উদ্ধার লাভ করতে পারে। পরম আনন্দ সহকারে স্নানযাত্রা দর্শন করলে মানুষ আজন্ম যা পাপ করেছে তা বিনষ্ট হয়ে যায়।”  

 

   তাই আপনারা যে যেই বর্ণেই থাকুন না কেন সর্ব অবস্থাতেই জগন্নাথ দেবকে স্নান করাতে পারেন কারণ জগন্নাথের কাছে কোন বিভেদ নেই। জগন্নাথ হলেন করুনার বিগ্রহ। তাই আপনারা জগন্নাথকে স্নান বেদীতে অবস্থানরত জগন্নাথ কে দর্শন করবেন, জগন্নাথ কে স্নান করাবেন তবেই আপনারা জগন্নাথের বিশেষ কৃপা লাভ করতে পারবেন। হরে কৃষ্ণ