শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশীর ব্রত মাহাত্ম্যঃ কেন পালন করব এবং কিভাবে করব। Narsingh Chaturdashi Mahatama
আমরা সকলেই বিভিন্ন তিথি পালন করে থাকি একাদশী তিথি দূর্গা অষ্টমী তিথি আরো অন্য সকল তিথি । কিন্তু সকল তিথির থেকে এই নৃসিংহ চতুর্দশী তিথি এতটাই মাহাত্ম্যপূর্ণ যা আজকে আলোচনা করব -
নৃসিংহ চতুর্দশীর ব্রত মাহাত্ম্যঃ
১০০০০০০ দূর্গাষ্টমী =১০০০ একাদশী
১০০০ দূর্গাষ্টমী =১ একাদশী
১০০০ একাদশী=১নৃসিংহ চতুর্দশী
১নৃসিংহ চতুর্দশী=১০০০০০০ দূর্গাষ্টমী
মহাদেব শিবজী, ব্রহ্মাজী, দূর্গাদেবীসহ দেবলোকের সকল দেবদেবীগণ নিষ্ঠাভরে নৃসিংহদেবের এই উপবাস করেন। ১০ লক্ষ দূর্গাষ্টমী ব্রত করলে যে ফল হয়, ১০০০টি একাদশী ব্রত প্রভাবে যে ফল হয়, শুধুমাত্র ১টি নৃসিংহ চতুর্দশী ব্রত করলে সে ফল হয়।
যে ১০০০/টা দূর্গাপুজা করলে যে পূণ্য হয়, একটা একাদশী ব্রত করলে সে পূণ্য হয়, কারণ দূর্গাপুজা যে ব্রত করা হয় সেটাকে ব্রত বলা হয়, আর কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু একাদশীকে মহাব্রত বলেছে। আর ১০০০/টা একাদশী ব্রত করলে যে পূ্ণ্য হয়, একটা নৃসিংহ চতূর্দশী কেউ ভক্তি ভরে করলে তার সেই পূণ্য লাভ হয়।
যেখানে শিব, ব্রহ্মা, কালীসহ সকল দেবদেবীই এই নৃসিংহদেবের চতুর্দশী উপবাস করেন সেখানে আমি আপনি সাধারণ মানুষের তো কথাই নেই। তাই নৃসিংহদেবের অহৈতুকী কৃপালাভ থেকে বঞ্চিত না হতে কেএই নৃসিংহদেবের চতুর্দশী উপবাস না থাকার কথা ভুলেও ভাববেন না। কেউ যদি একাদশী বা অন্য কোনো ব্রত নাও করে থাকেন অন্তত এই নৃসিংহ চতুর্দশীতে কৃপা করে গোধূলি (সন্ধ্যার কিছু আগে) পর্যন্ত উপবাস করুন এবং প্রতিবছরের জন্য এই মহাপবিত্র দিনে উপবাস থাকা বাধ্যতামূলক করে রাখুন। কেননা এই ব্রত শুধুমাত্র নৃসিংহদেবের ভক্তরা নয়, সাধারণ মানুষ সবাই করতে পারবে। গোধূলির পর অনুকল্প মহাপ্রসাদ (ফলমূল) খাওয়া যাবে। পরদিন যথাসময়ে পারণ করতে হবে।
বৃহৎনারদীয়সিংহ পুরাণে ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব পরম ভক্ত প্রহ্লাদকে বললেন-
বর্ষে বর্ষে তু কর্তব্যং মম সন্তুষ্টি কারণম।
মহা গুহ্যমিদং শ্রেষ্ঠং মানবৈর্ভব ভীরুভিঃ।
অনুবাদঃ প্রতি বছর আমার সন্তুষ্টি উদ্দেশ্যে নৃসিংহ চতুর্দশী ব্রত্য কর্তব্য। জন্ম-মৃত্যুময় সংসার ভয়ে মানুষ এই পরম গোপনীয় ও শ্রেষ্ঠ ব্রত পালন করবে।
বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশীতে শ্রীনৃসিংহদেব আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাই এই তিথিতে ব্রত পালন পূর্বক তার পূজা ও উৎসব করতে হয়।
শ্রীনৃসিংহদেব বললেন, আমার ব্রতদিন জেনেও যে ব্যক্তি লঙ্ঘন করে, চন্দ্র-সূর্য যতদিন থাকবে ততদিন নরক যাতনা ভোগ করবে। যদিও আমার ভক্তরা এই ব্রত করে থাকে তবুও প্রত্যেকের এই ব্রতে অধিকার আছে।
কিভাবে পালন করবেন
নৃসিংহ চতুর্দশীর আগের দিন অবশ্যই নিরামিষ আহার করবেন ।বারোটার আগেই রাতের খাবার খেয়ে নিলে ভাল এবং ভালো করে দাঁত ব্রাশ করে নেবেন। একাদশিরর আগের দিন যেভাবে সংকল্প করতে হয় ঠিক সেভাবে সংকল্প করবেন যেন আপনারা ভক্তি ভাবে সঠিকভাবে শ্রী ভগবান নৃসিংহ চতুর্দশী পালন করতে পারেন।
নৃসিংহ চতুর্দশীর দিন ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান করবেন ভগবানের মঙ্গল আরতি, নৃসিংহ আরতি, তুলসী আরতি করবেন। যদি সম্ভব হয় আপনার নিকটস্থ ইসকন মন্দিরে আসতে পারেন এবং মন্দিরের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন। আর যদি বাড়িতে থাকেন তাহলে ভগবান নৃসিংহ দেবের চিত্রকটে পুষ্প নিবেদন করতে পারেন মালা পড়াতে পারেন ।এই দিন নৃসিংহ প্রণাম মন্ত্র, নৃসিংহ স্তব মন্ত্র, নৃসিংহ দেবের অষ্টতর শতনাম পাঠ করবেন এই দিন বেশি বেশি করে প্রহ্লাদ চরিত পাঠ-কীর্তন করবেন অর্থাৎ ভাগবত অধ্যয়ন করবেন এবং বেশি করে হরিনাম জপ করবেন।
গোধূলি লগ্নে শ্রীনৃসিংহদেবের অভিষেক। তাই গোধূলি পর্যন্ত উপবাস থাকতে হবে। তারপর অভিষেকের চরণামৃত দিয়ে উপবাস ভেঙ্গে একাদশীর ন্যায় অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করা যেতে পারে। অভিষেক করতে না পারলে বা নৃসিংহদেবের শ্রী বিগ্রহ বা চিত্রপট না থাকলে শ্রী নারায়ণ বিগ্রহ বা চিত্রপটে ভোগ নিবেদন করে (পঞ্চশস্য ব্যতীত একাদশীর মতো) প্রসাদ গ্রহণ করা যেতে পারে তবে নিজ্জলা ব্রতই উত্তম।
যারা সদা গ্রহাদির পীড়ন ভোগ করছেন তারা নৃসিংহ চতুর্দশী তিথিতে উপবাস থেকে ১০৮ জোড়া তুলসীপাতা দ্বারা নৃসিংহ দেবের অষ্টোত্তর শতনাম পাঠ করে চরণে অর্পণ করলে সমস্ত অপগ্রহাদির উপদ্রুব বিদূরিত হয়৷