ভগবান শব্দের অর্থ কী? ভগবান কে? What is the meaning of the word God? who is god?

ভগবান শব্দের অর্থ কী? ভগবান কে? What is the meaning of the word God? who is god?

পৃথিবীতে কোন কিছুই এমনি এমনি সৃষ্টি হয় নি, এই সৃষ্টির পিছনে একজন স্রষ্টা অবশ্যই রয়েছেন। তাই আমরা যেহেতু সৃষ্টি তাই আমাদেরও একজন স্রষ্টা রয়েছেন। সেই স্রষ্টাকে আমরা সৃষ্টিকর্তা বা ভগবান বলে সম্বোধন করি। কিন্তু আমরা অনেকেই ভগবান শব্দের অর্থ কি বা ভগবান কে? সেটা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি না। তাই আমরা এক একজনকে ভগবান হিসেবে সম্বোধন করি এবং আরাধনা করি তাই আসুন জেনে নেয়া যাক ভগবান শব্দের অর্থ কি?এবং ভগবানকে কে? 

 

     প্রথমে আমরা জেনে নেই  ভগবান [ভগ+বান] এখানে দুটি শব্দ রয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিতে যদি আমরা বিবেচনা করি এবং প্রশ্ন করি পৃথিবীতে যার রুপ রয়েছে তাকে আমরা কি বলি- উত্তর হল রূপবান। যার প্রচুর পরিমাণ ধন রয়েছে তাকে আমরা কি বলি- উত্তর হল  ধনবান । তেমনি আমরা বলতে পারি যার অনেক  “ভগ”  রয়েছে তিনি হলেন  ভগবান।   

 

      এখন আমরা জেনে নেই  “ভগ”  শব্দের অর্থ কি?  “ভগ”  শব্দের অর্থ হলঃ যার মধ্যে ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকবে। এই ছয়টি গুণ কি তা কি আমরা জানি। আসুন জেনে নেয়া যাক শাস্ত্রতে কি বলা হয়েছে। 

 

বিষ্ণুপুরাণে আছে- 

        ঐশ্বর্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ প্রিয়ঃ 

    জ্ঞান বৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নাতু ভগ ইতিঙ্গনা  (বিষ্ণুপুরাণ- ৬/৫/৪৭)   

অর্থাৎ  সমগ্র ঐশ্বর্য, সমগ্র বীর্য, সমগ্র যশ, সমগ্র সৌন্দর্য, সমগ্র জ্ঞান ও সমগ্র বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণের সমাহারকে  “ভগ” বলে। এই ছয়টি অচিন্ত গুণ যার মধ্যে পূর্ণরূপে বিদ্যমান তিনিই ভগবান। ভগবান শব্দের প্রথম অক্ষর  ভ  এর অর্থ হচ্ছে ভর্তা,  এর অর্থ হচ্ছে নেতা বা স্রষ্টা,  এর অর্থ বাস করা,  ন  এর অর্থ বিদ্যমান। 

 

ভগবান কে?  who is god?   

      যদি একটি শিশুকে প্রশ্ন করা হয় তোমার  পিতা কে? তাহলে সেই শিশুটি এর উত্তর যথাযথভাবে কার কাছ থেকে পেতে পারে অবশ্যই মা। কারণ মায়েই এই মাত্র বলতে পারেন এই শিশুটির আসল  পিতা কে?   তেমনি ভগবান কে তা আমরা জানতে পারি আমাদের শাস্ত্র মাতার কাছ থেকে-  

 

ব্রহ্মা হলেন পৃথিবীর প্রথম সৃষ্টি জীব হলেন ব্রহ্মা তাই ব্রহ্মা জানেন ভগবান কে? 

 

  ব্রহ্মসংহিতায় ব্রহ্মাজি স্বয়ং বলেছেন- 

      ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ। 

       অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব কারণকারণম্। 

 শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান। তাঁর বিগ্রহ সৎ চিৎ আনন্দময় অর্থাৎ নিত্য শাশ্বত, চিন্ময় বা জ্ঞানময় এবং চিদানন্দময়। তাঁর কোনো আদি নাই। কারণ তিনিই অনাদিরও আদি, সবকিছুর কারণ।  

 

ভাগবতে আছে, 

  এতে চাংশ কলা: পুংস: কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং 

   ইন্দ্রারিব্যাকুলং লোকং মৃড়য়ন্তি যুগে যুগে ।। (ভাগবতম ১/৩/২৮)। 

 অর্থাৎ কৃষ্ণই হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান আর সব হচ্ছে তাঁর অংশ এবং কলা। “আরাদ্ধ ভগবান ব্রজেশতনয়স্তদ্ধাম বৃন্দাবন” আরাদ্ধ ভগবান হচ্ছেন ব্রজেশ তনয় কৃষ্ণ।  

 

শিব পুরাণে আছে, শিব পার্বতিকে বলছেন,  "আরাধনানাং সর্বেষাং বিষ্ণোরারাধনং  

পরম”  অর্থাৎ সমস্ত আরাধনার মধ্যে বিষ্ণু (কৃষ্ণের আর একটি নাম) আরাধনাই পরম। 

 

“স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ,  

          কৃষ্ণ সর্বাশ্রয়,  

পরম ঈশ্বর কৃষ্ণ  

           সর্ব শাস্ত্রে কয়" (চৈঃচ:আ:২/১০৬)। 

 

“কৃষ্ণ এক সর্বাশ্রয়,  

        কৃষ্ণ সর্বধাম,   

 কৃষ্ণের শরীরে  

  সর্ব বিশ্বের বিশ্রাম”। (চৈঃচ:আ:২/৯৬)। 

 

গীতায় ভগবান স্বয়ং বলছেন, 

মত্তঃ পরতরং নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয়। 

ময়ি সর্বমিদং প্রোতংসূত্রে মনিগনা ইব।। (গীতা-৭/৭) 

অর্থাৎ হে ধনঞ্জয় আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। সূত্রে যেমন মনিসমূহ গাঁথা থাকে তেমনই সমস্ত বিশ্বই আমাতে ওতপ্রোতভাবে অবস্থান করে। আরও বলা হয়েছে, “পিতাহমস্য জগতো মাতা ধাতা পিতামহ:” (গীতা-৯/১৭)। অর্থাৎ আমিই এই জগতের পিতা, মাতা, ধারণকর্তা এবং পিতামহ। 

 

     শাস্ত্রে ভগবানের ৬৪টি গুণাবলির কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে ৫০টি গুণ মানুষ কিছু অংশে অর্জন করতে পারে। ৫৫টি গুণ আংশিকভাবে  ব্রহ্মা ও শিবজির মধ্যে রয়েছে। ৬০টি গুণ পূর্ণভাবে নারায়ণের মধ্যে বিদ্যমান। ৬০টির সাথে অতিরিক্ত ৪টি গুণ যথা  বেণু মাধুরী, লীলা মাধুরী, ভগবৎ প্রেমমন্ডিত ভক্ত পরিবৃত, রূপ মাধুরী অর্থাৎ ৬৪টি গুণ পরিপূর্ণভাবে লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণে বিদ্যমান। এই জন্য তিনি হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান। কখনও কখনও ব্রহ্মা, শিব প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ জীবকেও ভগবান বলা হয়। কিন্তু একমাত্র স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান । 

 

    আসুন আমরা আমাদের ধর্মকে জানার চেষ্টা করি এবং ধর্মকে জানার জন্য শাস্ত্র অধ্যয়ন করি এবং সমস্ত শাস্ত্রে এটাই প্রতিপন্ন করে যে কৃষ্ণই হলেন স্বয়ং ভগবান আদি পুরুষ সর্বকারণের পরম কারণ তাই আমাদের সকলের উচিত পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করা তার ভক্ত হওয়া এবং তার গুণ-কীর্তন করা। আর এটি হল মানব জীবনের পরম কর্তব্য। আমার এই পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে অন্যদের দেখার জন্য শেয়ার করে দিবেন।